শুক্রবার জুমার নামাজের পর নতুন সরকার গঠনের কথা থাকলেও এখনও কোনো ঘোষণা দিতে পারেনি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়া তালেবান।
বিষয়টি নিয়ে তালেবানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি। ফলে কেন বিষয়টি নিয়ে দেরি হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
নিজেদের মধ্যে বিভেদের কারণে সরকার গঠনে দেরি হচ্ছে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা গেছে। পাশাপাশি, বিপর্যস্ত অর্থনীতি, পাঞ্জশির উপত্যকায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে তালেবানের তীব্র লড়াই ও ব্যাপক মাত্রায় গণ-অনাস্থায় নতুন সরকারের ঘোষণা বিলম্বিত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ১৫ আগস্ট থেকেই কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে। প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি প্রতিরোধ না করে চলে যান দেশ ছেড়ে।
সেদিন থেকেই আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠে তালেবান। এর মধ্যে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগ দিয়েছে। দেশ কীভাবে চলবে, কার কাছ থেকে অর্থ সহায়তা আসবে, এমন ঘোষণাও দেয়া হচ্ছে।
তবে সরকারের প্রধান কে, কোন ধরনের সরকার দেশ চালাবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
গোয়েন্দা প্রধানের পদে বসানো হবে তালেবান মুখপাত্র নাজিবুল্লাহকে। কাবুলের গভর্নরের দায়িত্ব নেবেন মোল্লা শিরিন। রাজধানীর মেয়র হতে যাচ্ছেন হামদুল্লাহ নোমানি। ফাইল ছবি
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার জানানো হয়, শুক্রবার জুমা শেষে সরকারের ঘোষণা আসবে। কিন্তু সেই ঘোষণা আসেনি সন্ধ্যা পর্যন্ত।
দেশটির সংবাদমাধ্যম টলোনিউজ তালেবানের গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বারাদর সরকারের প্রধান হতে পারেন। তবে সেই সরকার কবে ঘোষণা হবে, সে বিষয়ে তারাও স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেনি।
আফগানিস্তান পুনর্গঠনে হাত বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া চীনের সংবাদমাধ্যম শিনহুয়াও এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
প্রতিবেশী পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য ডন’ও আফগানিস্তানে সরকার গঠন বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি।
দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম জিও টিভি তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদকে উদ্ধৃত করে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। তিনি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ‘পাক-আফগান ইয়ুথ ফোরামের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন।
এই আয়োজনে তালেবানের মুখপাত্র আশ্বস্ত করে বলেছেন, আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তানকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি কথা বলেছেন, আফগানিস্তান, চীনের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে।
তবে সরকার গঠন নিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, নতুন সরকারের ঘোষণা একদিন পিছিয়ে শনিবার নির্ধারণ করা হয়েছে।
যে আভাস দিয়েছে টলোনিউজ
আফগানিস্তানের গণমাধ্যমটি বলছে, তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব ও দোহায় গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান শের মোহাম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজাইয়ের সঙ্গে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান মোল্লা বারাদরের।
‘বিশ্বাসীদের নেতা’ হিসেবে পরিচিত হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হতে যাচ্ছেন বলে গোপন সুত্রের বরাতে উঠে এসেছে টলোনিউজের প্রতিবেদনে। সংগঠনের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক বিষয়ে ইসলামি এই পণ্ডিতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
টলোনিউজ বলছে, তালেবান সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন গুল আগা। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন সাদর ইব্রাহিম।
সেই সঙ্গে গোয়েন্দা প্রধানের পদে বসানো হবে গোষ্ঠীটির মুখপাত্র নাজিবুল্লাহকে। আর কাবুলের গভর্নরের দায়িত্ব নেবেন মোল্লা শিরিন। রাজধানীর মেয়র হতে যাচ্ছেন হামদুল্লাহ নোমানি।
সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু ২৪ আগস্ট
কাবুল পতনের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার নবম দিনে গত ২৪ আগস্ট সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে তালেবান। তবে সেটা গতানুগতিক ধারায় ছিল না।
সাধারণত সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সবার আগে ঘোষণা করা হয় সরকার প্রধানের নাম। তালেবান তা করেনি। অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম সবার আগে ঘোষণা করা হয়। ফলে তালেবান সরকারের প্রধান কে হচ্ছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছিল।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে দেশের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের অঙ্গীকার করে তালেবান।
তালেবানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে আফগানিস্তানের একমাত্র প্রদেশ পাঞ্জশির উপত্যকার দখল নিয়ে তীব্র লড়াই হয়েছে সংগঠনটির যোদ্ধা ও স্থানীয় বিদ্রোহীদের মধ্যে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন সরকারে থাকছে না তালেবানের পুরোনো কোন নেতা।