আফগানিস্তানে মুদ্রাবাজার চালু রাখতে ব্যাংকগুলোকে আশ্বস্ত করার চেষ্টায় ব্যস্ত নতুন শাসক দল তালেবান। বেশ কিছু আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন অনিশ্চিত। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে এরই মধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে হাজি মোহাম্মদ ইদ্রিসকে।
কিন্তু কার্যক্রম চালু রাখতে ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের জোগান আসবে কিভাবে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা স্পষ্ট করেনি তালেবান।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আফগানিস্তান ব্যাংকস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসহ দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যাংকারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন হাজি ইদ্রিস। জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তালেবান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চার ব্যাংকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে রয়টার্স। এদের মধ্যে দুইজন উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের ওই বৈঠকে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। ফলে চার দশকের সংঘাতে জর্জরিত দেশটিতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নতুন শাসকগোষ্ঠীর সক্ষমতাও প্রশ্নবিদ্ধ।
বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ আফগানিস্তান হিসেবে বিপুল পরিমাণ বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত বেসামরিক সরকার। ২০২০ সালেও দেশটিতে মোট বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ৪০ শতাংশের বেশি এসেছিল আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে, বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান।
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর সহায়তার বেশিরভাগই স্থগিত করা হয়েছে। বাকি সহায়তার বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা নেই। আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে গচ্ছিত আছে, তাতেও প্রবেশাধিকার পাবে না তালেবান শাসকগোষ্ঠী।
এ অবস্থায় তরল অর্থের সংকট ও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া তালেবান। এরই মধ্যে আফগানিস্তানে খাদ্যপণ্যের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৭৫ শতাংশ।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রথম দফার শাসনামলে আফগানিস্তানের ব্যাংকিং খাতে খুব একটা সক্রিয় ছিল না তালেবান। বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক সে সময় নিবন্ধন পেলেও কোনোটিই চালু হয়নি, ঋণদানের সংখ্যাও ছিল হাতেগোণা।
গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব নেয়া হাজি ইদ্রিস তালেবানের প্রতি বিশ্বস্ত। কিন্তু উচ্চশিক্ষায় তার কোনো ডিগ্রি বা অর্থবিষয়ক প্রশিক্ষণ নেই।
আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিএবির কাছে বর্তমানে কী পরিমাণ নগদ অর্থ আছে, তা জানাননি হাজি ইদ্রিস বা তার সহকর্মীরা। যুক্তরাষ্ট্রে গচ্ছিত অর্থে প্রবেশাধিকার পেতে কিভাবে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করবে, সে বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি।
ক্ষমতাচ্যুত আফগান সরকার দেশের বাইরে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার গচ্ছিত রেখেছিল। খুব শিগগিরই সে অর্থে তালেবান হাত দিতে পারবে, এমন সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যাংকের লেনদেনের প্রায় ৮০ শতাংশ ডলারে হয়ে থাকে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন নতুন সরকারের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’
গত কয়েকদিনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কিছু নগদ অর্থ সরবরাহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
হাজি ইদ্রিসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়া আরেক ব্যাংকার জানান, তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছে।
এ অবস্থায় আপাতত গ্রাহকরা যেন নিজ নিজ ব্যাংক হিসাব থেকে লেনদেন করতে পারেন, সে চেষ্টাই করা হচ্ছে। এ জন্য মুদ্রাবাজার চালু রাখতে অন্য দেশে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক হিসাব ও কোষাগারে তালেবানের প্রবেশাধিকার গুরুত্বপূর্ণ।
চলতি সপ্তাহে আফগানিস্তানের ব্যাংকগুলোতে পুনরায় কার্যক্রম চালু হয়েছে, তবে সীমিত পরিসরে। সপ্তাহে মোট ২০০ ডলার পর্যন্ত নগদ অর্থ উত্তোলন করতে দেয়া হচ্ছে। তারল্য সংকটের মধ্যে ইন্টারনেটভিত্তিক কিছু লেনদেনও হচ্ছে।
বৈঠকে ব্যাংকের নারী কর্মীদেরও আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন হাজি ইদ্রিস। জানিয়েছেন, ব্যাংকে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপের কোনো পরিকল্পনা নেই তালেবানের।
আফগানিস্তানের কিছু ব্যাংকে প্রায় ২০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী নারী। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শরিয়াহ আইনপন্থি তালেবানের বিধিনিষেধের শঙ্কায় কর্মক্ষেত্রে যোগ দেননি তারা।
তবে হাজি ইদ্রিসের আশ্বাসের পর অনেক ব্যাংকই নারী কর্মীদের ডেকে পাঠাতে শুরু করেছে।