বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তালেবানের কমান্ডো বাহিনী ‘বদরি ৩১৩’

  •    
  • ৩১ আগস্ট, ২০২১ ২২:৪৮

তালেবান বললে যে চেহারাটি ভেসে ওঠে সেটি হলো, আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা ও সোভিয়েত আমলের অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামীণ যোদ্ধা। কিন্তু গোষ্ঠীটির আরেক চেহারাও নতুন করে চোখে পড়ছে।

তালেবান যোদ্ধারা আগস্টের মাঝামাঝি কাবুল দখলের পর থেকেই সুসজ্জিত একটি বাহিনীর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সেখানে দেখা যায়, আধুনিক অস্ত্র ও সামরিক পোশাকে সজ্জিত কয়েকজন সাঁজোয়া যান ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

পরে জানা যায়, এরা সবাই তালেবানের বিশেষ বাহিনী ‘বদরি ৩১৩’ এর সদস্য।

সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের পর কাবুল বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে কমান্ডো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনীটি।

৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বদর যুদ্ধে প্রতিপক্ষ কুরাইশদের বিরুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন যোদ্ধা নিয়ে লড়াই করে বিজয়ী হয়েছিলেন মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.)।

সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তালেবান তাদের এই বাহিনীর নাম রেখেছে ‘বদরি ৩১৩’।

ধারণা করা হচ্ছে, পাকিস্তানের সহায়তায় আফগানিস্তানের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে এই বাহিনীটি গড়ে তুলেছে তালেবান। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।

কাবুল দখলের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ‘বদরি ৩১৩’ নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে তালেবান।

সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রে সজ্জিত চারজনের একটি দল আফগানিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলে তালেবানের পতাকা উত্তোলন করছে। এই ছবিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জাপানের একটি দ্বীপ দখলের পর তোলা ছবির অনুকরণে করা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনুকরণে তালেবানের প্রোপাগান্ডা ছবি

সাধারণ তালেবান যোদ্ধারা জোব্বা ও পায়জামা পরেন। তাদের পরিচিত অস্ত্র হলো সোভিয়েত বাহিনীর কাছ থেকে দখল করা একে-৪৭। অন্যদিকে বিশ্বের যেকোন দেশের বিশেষ বাহিনীর আদলে সজ্জিত বদরি ৩১৩ এর সদস্যরা সজ্জিত এম-৪ রাইফেল, নাইট ভিশন গগলসের মতো অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে।

বাহিনীটি নিয়ে কিছুদিন আগে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।

সেখানে বলা হয়, ‘তালেবান বললে যে চেহারাটি ভেসে ওঠে সেটি হলো, আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা ও সোভিয়েত আমলের অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামীণ যোদ্ধা। কিন্তু গোষ্ঠীটির আরেক চেহারাও নতুন করে চোখে পড়ছে।

কাবুল বিমানবন্দরের পাহারায় বদরি ৩১৩ বাহিনীর এক সদস্য

সম্প্রতি রাজধানী কাবুলসহ আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় এমন বিশেষ বাহিনী পাহারা দিচ্ছে যারা গ্রামীণ তালেবান যোদ্ধাদের থেকে একেবারেই আলাদা। এরা শুধু কৃষক বা পশুপালকদের সন্তান নয়। বরং প্রশিক্ষণ পাওয়া কমান্ডা বাহিনী, যাদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রশিক্ষিত সেনাদলের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।’

ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক বছর ধরে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী দুর্গম অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পেয়েছে বাহিনীটি।

বদরি ৩১৩ ও হাক্কানি নেটওয়ার্ক

আফগানিস্তানের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ সামরিক গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয় হাক্কানি নেটওয়ার্ককে। যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান দখলের পর থেকেই এই গোষ্ঠী অনেকগুলো ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স টোয়েন্টি ফোরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বদরি ৩১৩ কে প্রশিক্ষণ দেয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক।

আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞ প্যারিসের সোরবন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গিলেস ডরনসোরোর মতে, তালেবানের এই কমান্ডো বাহিনী নতুন ধারার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান এই বিশেষ বাহিনীকে গোপনে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এমন সম্ভাবনা প্রবল। আমরা ২০০০ সালের পর থেকেই তালেবানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পেশাদারত্ব দেখতে পাচ্ছি।’

গিলেস ডরনসোরো বলেন, ‘তাদের পিতামহ সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ লড়েছে, এখনকার যুদ্ধ তার চেয়ে আলাদা। এবার তারা অনেক বেশি প্রস্তুত ও প্রশিক্ষিত।’

আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের শত-কোটি ডলারের অস্ত্র ও অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম এখন তালেবানের হাতে।

আফগান সেনাবাহিনীর শক্তি বাড়াতে সাঁজোয়া যান, ড্রোন, হেলিকপ্টার আর উড়োজাহাজসহ গত কয়েক বছরে ৩২ হাজার অস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসবের কতটা তালেবানের হাতে পড়েছে, সেগুলোর ধরন- ইত্যাদি এখনও অস্পষ্ট। কিন্তু সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অস্ত্রভাণ্ডার যে ব্যাপক সমৃদ্ধ হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

বদরি ৩১৩ এর উপস্থিতি এই ইঙ্গিতই দেয়, এসব অস্ত্র ব্যবহার করে শক্তিশালী নিয়মিত বাহিনী গড়ে তুলতে যাচ্ছে তালেবান।

গত ২০ বছরে আফগান সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রায় পুরোটাই যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি সহযোগিতা ও সামরিক সরঞ্জামনির্ভর ছিল।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, শেষ কয়েক বছরেই আফগান সেনাবাহিনীকে সাত হাজারের বেশি মেশিন গান, ২০ হাজার গ্রেনেড, চার হাজার ৭০০ সাঁজোয়া যান, হেলিকপ্টার ও ছোট বিমানসহ দুই শতাধিক আকাশযান, ড্রোনের মতো সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এ সময়ে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে গড়ে তোলা ও প্রশিক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় ছিল আট হাজার ৩০০ কোটি ডলার।

এ বিভাগের আরো খবর