আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে বোমা হামলার পর নিহতের সংখ্যা বাড়ার কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কাবুলে দায়িত্বরত এক সাংবাদিক বলছেন, বোমার আঘাতের চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন সেখানে উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের গুলিতে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে শনিবার এক টুইট বার্তায় এ দাবি করেন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বিবিসির প্রতিনিধি সেকান্দার কেরমানি।
তিনি লিখেছেন, ‘বোমার আঘাতে যত মানুষ মারা গেছে, তার চেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন বোমা হামলার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের গুলিতে।’
আরেক টুইট বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরকে প্রশ্ন করা হলেও তারা এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর দেয়নি।
তালেবানের কাবুল দখলের পরে দেশ ছাড়তে মরিয়া আফগানদের উপস্থিতির মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকেলে বিমানবন্দরের বাইরে এই বোমা হামলা চালানো হয়। পরপর দুটি শক্তিশালী বোমার আঘাতে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা।
নামপ্রকাশের অনিচ্ছুক তালেবানের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, বোমা হামলায় ১৭০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের অনেকেই নারী ও শিশু।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ সেনা রয়েছেন।
ইতোমধ্যে বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের শাখা ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান প্রভিন্স বা আইএস-কে।
ধারণা করা হচ্ছে, তালেবানের হাতে নিজেদের নেতা আবু ওমর খোরাসানির হত্যার প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা চালিয়েছে আইএস-কে।
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার এক দিন পর ১৬ আগস্ট আইএসের দক্ষিণ এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যবিষয়ক প্রধান খোরাসানির শিরশ্ছেদ করে তালেবান। পরে মরদেহের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দেয় তারা।
বিমানবন্দরের বাইরে বোমা হামলায় নিজেদের সেনা নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হামলাকারীদের খুঁজে বের করে প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
কাবুল বিমানবন্দরে বাইরে হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন আইএস।
হামলার পর শুক্রবার পুরোদমে উদ্ধারকাজ শুরু করতে পেরেছে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এ দিন কাবুল বিমানবন্দর থেকে ৩ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউজ জানায়, দুই সপ্তাহে কাবুল বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট সেনারা ১ লাখ ১১ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছেন।
তালেবানের সঙ্গে চুক্তির সময়সীমা হিসেবে ৩১ আগস্টেই উদ্ধারকাজ শেষ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর কাবুল বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের কাছে ছেড়ে দেবে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্র কাবুলে আরও হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এ জন্য তাদের নাগরিক ও আফগান নাগরিকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়েছে দেশটি।
বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে পরাশক্তিটি।
১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের মুখে কাবুল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হওয়া কওমি মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র গোষ্ঠীটি সম্প্রতি দেশটির সঙ্গে চুক্তিতে আসে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে।