চলতি মাসের মাঝ বরাবর তালেবানের হাতে কাবুল পতনের পরপরই সংগঠনটির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকার পর আফগানিস্তানে প্রবেশ করেন। কাবুলের মসজিদে তালেবান নেতারা এরই মধ্যে প্রকাশ্যে ধর্মোপদেশ দিয়েছেন, বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, এমনকি আফগান ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আড্ডাও মেরেছেন।
তবে তালেবানের প্রধান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানে আসেননি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, আখুন্দজাদা কোথায়?
এমনিতেই দীর্ঘদিন জনসমক্ষে না আসায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বা বোমা হামলায় আখুন্দজাদার মৃত্যু হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
২০১৬ সাল থেকে তালেবানপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন আখুন্দজাদা।
যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় আখুন্দজাদার পূর্বসূরি মোল্লা আখতার মনসুরের মৃত্যু হয়।
এ ছাড়া তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের মৃত্যুও দীর্ঘদিন গোপন রাখে তালেবান। মৃত্যুর দুই বছর পর ২০১৫ সালে মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব বাবার মৃত্যুর বিষয় প্রথম বিশ্বকে জানান।
তাই কাবুল পতনের পর আখুন্দজাদার প্রকাশ্যে না আসা তার জীবিত থাকা নিয়ে সংশয়ের উদ্রেক করেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, আখুন্দজাদার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবে বার্তা দেয়ার মধ্যেই তার প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড সীমিত।
আখুন্দজাদার কেবল একটি ছবি প্রকাশ করে তালেবান। জনসমক্ষে তিনি কখনো হাজির হননি। কোথায় থাকেন, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাইরে কেউ জানে না।
১৫ আগস্ট কাবুল দখলের পর আখুন্দজাদার গতিবিধির বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে তালেবান।
আখুন্দজাদা কোথায় আছেন, চলতি সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হলে তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আল্লাহ চাইলে শিগগিরই তার দেখা পাবেন।’
শীর্ষ নেতাদের আড়ালে রাখার দীর্ঘ ইতিহাস তালেবানের রয়েছে।
নব্বইয়ের দশকে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর সংগঠনটির রহস্যময় প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর খুব কমই কাবুলে আসেন।
কান্দাহারে নির্জনে বসবাস করতেই পছন্দ করতেন মোল্লা ওমর। এমনকি দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতেও খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না তিনি।
তা সত্ত্বেও মোল্লা ওমরের নির্দেশই ছিল দলের জন্য শিরোধার্য। তার মৃত্যুর পর সমীহ করার মতো এত বড় ব্যক্তিত্বের দেখা আর পায়নি তালেবান।
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমর। ছবি: সংগৃহীত
বেলজিয়ামভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এশিয়া কর্মসূচির প্রধান লরেল মিলার বলেন, ‘মোল্লা ওমরের মতোই আখুন্দজাদা নিভৃতে জীবনচর্চার পথই বেছে নিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় আখুন্দজাদার পূর্বসূরি মোল্লা আখতার মনসুর প্রাণ হারান। এ কারণে নিরাপত্তা বিবেচনায় তাকে ঘিরে তালেবানের গোপনীয়তা স্বাভাবিক।’
মিলার বলেন, ‘তালেবানের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আখুন্দজাদা শিগগিরই জনসমক্ষে হাজির হবেন।
‘আখুন্দাজাদা মারা গেছেন, জনমনে এ সংশয় দূর করতেই হয়তো তিনি প্রকাশ্যে আসবেন।
‘তবে একবার নিজেকে দেখা দেয়ার পর দূর থেকে আখুন্দজাদার সংগঠনের নেতৃত্ব পরিচালনার সম্ভাবনাই বেশি।’