ভারতের পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধী বিজেপির মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।
করোনার কারণে এখুনি নির্বাচনে আগ্রহী নয় বিজেপি। আর বিধানসভার নির্বাচনে পরাজিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে তার পদে বহাল রাখতে নির্ধারিত ছয় মাস সময়সীমার মধ্যে উপনির্বাচনে আগ্রহী তৃণমূল। ফলে দুই পক্ষের টানাপোড়েন চরমে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্রের সঙ্গে দেখা করে, বিধায়ক শূন্য বিধানসভা আসনে দ্রুত নির্বাচন করার দাবি জানায়।
তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের তরফে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে একটি স্মারকলিপি তুলে দিয়ে বলা হয়, বাংলায় করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। কেরল, মহারাষ্ট্রসহ একাধিক রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ রাজ্যের পরিস্থিতি কখন আবার খারাপ হবে কেউ জানে না।
তাই রাজ্যের ৭টি বিধায়ক শূন্য আসনে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করানোর সংবিধানের ৩২৪ ধারা উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচন এখনই করার কথা বলা হয় তৃণমূলের পক্ষে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের তরফে কোভিড পরিস্থিতিতে উপনির্বাচন নিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে তাদের মতামত জানতে চেয়েছিল। বাম ও কংগ্রেস দল সব নির্বাচন সময় করার পক্ষে মত দিলেও বিজেপি রীতিমতো এক-দুই-তিন করে কারণ দেখিয়ে উপনির্বাচনের বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে।
বিজেপি মনে করে, ‘রাজ্যে এখনও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। রাজ্য সরকার বাস চালালেও লোকাল ট্রেন বন্ধ। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর উৎসবের মাসে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। রাজ্যে এখনও করোনো বিধিনিষেধ কার্যকর রয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছিল রাজ্য পুলিশ। রাজ্যের ১১২টি পৌরসভার নির্বাচন এখনো করা হয়নি। আর তাছাড়া রাজ্য সরকার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার চালাচ্ছে। ফলে এখনই উপনির্বাচন বাধ্যতামূলক নয়।’
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে হেরে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ৬ মাসের মধ্যে যে কোন কেন্দ্র থেকে তাকে নির্বাচিত হয়ে আসার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই তৃণমূলের তরফে সময়ে উপনির্বাচন করানোর তাড়া রয়েছে।
এর মধ্যে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে মুখ্যমন্ত্রী উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ভবানীপুরের বিজয়ী প্রার্থী কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
জুলাই মাসে দ্রুত উপনির্বাচনের জন্য তৃণমূলের একটি প্রতিনিধিদল মুখ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দরবার করেছিল। কমিশনের তরফে সেসময় আশ্বাস দেয়া হয়েছিল উপনির্বাচন সময়ে করতে চায় তারা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করেনি কমিশন। এবারও একইভাবে তৃণমূলের প্রতিনিধিদলকে নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে উপনির্বাচন করার পক্ষে কমিশন।
উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব বিকল্প ব্যবস্থার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সূত্রের খবর। কেননা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলে নিয়মানুযায়ী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে।
কমিশন কি উপনির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারে—সে প্রশ্নে তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য, রাজ্যের সাবেক মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা জহর সরকার বলেন, ‘আইনে আছে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বা কোনো সংকটে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে তার কোনো নজির নেই।’
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য বর্ষীয়ান লোকসভা সদস্য সৌগত রায় বলেন, ‘আমরা পরিসংখ্যান দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি, এখন রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আছে। এই অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব উপনির্বাচনের আয়োজন করাই বাঞ্ছনীয়। কমিশনও আমাদের আশ্বস্ত করেছে।'
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্যের উপনির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘তৃণমূল কমিশনে যেতেই পারে। তাতে কিছু যায় আসে না। মুখ্যমন্ত্রী স্কুল খুলতে দিচ্ছেন না। লোকাল ট্রেন চালাতে দিচ্ছে না। দুই বছর ধরে পৌরসভার ভোট করছে না। তারপর কোন নৈতিক অধিকারে তৃণমূল উপনির্বাচন করানোর কথা বলছে।’
বিজেপির উপনির্বাচন বিরোধিতাকে গুরুত্ব না দিয়ে তৃণমূল লোকসভা সদস্য সৌগত রায় বলেন, ‘বিজেপির মাথার ঠিক নেই। যা বলে, তার সবই ভিত্তিহীন। আসলে বিধানসভা নির্বাচনের হারের ধাক্কা এখনোও ওরা সামলাতে পারেনি।’