দেশের ৩১টি সংসদীয় রাজনৈতিক দলকে ভারত সরকার জানিয়েছে, আফগানিস্তানে আটকে থাকা ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে নেয়াটাই সরকারের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার।
বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোকে এ কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
আফগানিস্তানের ‘উদ্বেগজনক’ পরিস্থিতি নিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারাই যেন অবগত থাকেন, এ জন্য বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের পক্ষ থেকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল।
এতে উদ্ধারকাজ থেকে শুরু করে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের অবগত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি রাখেনি তালেবান।’
এদিনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এস জয়শঙ্কর। সংসদ ভবনে বেলা ১১টায় এ বৈঠক শুরু হয়।
সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ভালো না। ভারতের পক্ষে যত দ্রুত সম্ভব, ভারতীয়দের উদ্ধার করে আনার চেষ্টা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জনকে আফগানিস্তান থেকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ভারতীয় নাগরিক। তবে বেশ কিছু আফগান শিখ ও হিন্দুও রয়েছেন।
আফগানিস্তান থেকে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ কর্মসূচির নেয়া হয়েছে।
কী এই কর্মসূচি, কীভাবেই বা উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে, সেটি নিয়ে যাবতীয় তথ্য জানানো হয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাদের।
আমেরিকা, রাশিয়া, চীনের মতো বাকি দেশগুলো কীভাবে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে, সেটি নিয়েও বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়।
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, পিযূষ গোয়েল, প্রহ্লাদ যোশী, মুখতার আব্বাস নকভি, ভি মুরলীধরন ও মীনাক্ষী লেখি।
অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে কংগ্রেসের তরফে হাজির ছিলেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে, অধীর রঞ্জন চৌধুরী, এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, ডিএমকে নেতা টিআর বালু ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া। তৃণমূলের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সুখেন্দু শেখর রায় ও সৌগত রায়।
বৈঠকের শুরুতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর একটি উপস্থাপনা পরিবেশন করেন। সেখানে উদ্ধারকাজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কী রকম থাকবে, সেটি আগামী দিনের পরিস্থিতির ওপরেই নির্ভর করবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তিনি জানান, আপাতত সমস্ত নজর ভারতীয়দের উদ্ধারকাজের ওপরই দেয়া হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে অনেক ভারতীয়র নাম দূতাবাসের রেজিস্ট্রারে না থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নানা সমস্যা হচ্ছে।
আফগানিস্তানে প্রায় ৫০০ উন্নয়ন প্রকল্পে জড়িত রয়েছে ভারত। তাই ভবিষ্যতেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেই আগ্রহী, এ কথা জানানো হয় বৈঠকে। তবে বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই যাবতীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান জয়শঙ্কর।
কতটা ঝুঁকি নিয়ে বিশেষত কাবুল বিমানবন্দরে কী চরম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ভারতীয়দের উদ্ধার করে আনা হচ্ছে, সে বিষয়েও বিরোধীদের জানানো হয়।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালেবানদের সঙ্গে আমেরিকা যে দোহা চুক্তি করেছিল, তালেবানরা সেটি ভঙ্গ করেছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী সেনা প্রত্যাহার করলেও তালেবান বাহিনী শান্তি চুক্তি বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই জানানো হয় কেন্দ্রের পক্ষ থেকে।
বৈঠকে উপস্থিত বিজেডি নেতা প্রসন্ন আচার্য্য সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘আফগানিস্তান বৈঠকে সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর অস্বীকার করেছে। আমাদের বলেছে, আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের উদ্ধারের চেষ্টা জোরদার করা হচ্ছে।’