জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ ধৈর্য হারালে আপনারা উবে যাবেন- আফগানিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে এভাবেই মোদি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কাশ্মীরের নেত্রী মেহবুবা মুফতি।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা আফগানিস্তান ছাড়ার প্রাক্কালে সে দেশের অবস্থা তুলে ধরে সেখান থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা নিতে সরকারকে বার্তা পাঠান জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন এ মুখ্যমন্ত্রী।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতির সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের তুলনা টানেন পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (পিডিপি) প্রেসিডেন্ট মেহবুবা মুফতি।
ভারত সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের হাল দেখে শিক্ষা নেয়া উচিত, যেখানে তালেবানরা গোটা দেশের ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশকেও পালাতে বাধ্য করেছে।’মুফতির এ মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সমালোচনায় সরব হয়েছে বিজেপি থেকে কংগ্রেস।
২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার প্রসঙ্গে ফের সরব হয়েছেন কাশ্মীরি এই নেত্রী।
তালেবানের দখল নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এভাবে পরীক্ষা নিলে সরকারেরই বিপদ।
‘প্রতিবেশী দেশে কী হচ্ছে, তা দেখে শিক্ষা নেয়া উচিত সরকারের। যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশকেও নিজেদের ব্যাগ গুছিয়ে আফগানিস্তান ছেড়ে পালাতে হয়েছে।
‘আপনাদের কাছে এখনও সুযোগ রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা শুরু করার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি আলোচনার মাধ্যমে নিজের ভুল শুধরে নিয়েছিলেন।
‘আপনারাও বেআইনিভাবে জম্মু-কাশ্মীরের পরিচিতি যেভাবে কেড়ে নিয়েছেন এবং জম্মু-কাশ্মীরকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন, তা শুধরে নিন। না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।’
দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাম জেলায় দলীয় এক অনুষ্ঠানে মুফতি রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানান, যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা যেন হাতে অস্ত্র না তুলে নেন। কারণ বন্দুক বা পাথর ছুড়ে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না।
আফগানিস্তানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘তালেবানরা আফগানিস্তানের দখল নিলেও ওরা এখন বলছে, অস্ত্রের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
‘গোটা বিশ্বের নজর এখন আফগানিস্তান ও তালেবানের ওপর।
‘তালেবান কেমন ব্যবহার করছে, আগের মতোই কঠোর আইন প্রয়োগ করবে নাকি সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে, তা গোটা বিশ্ব দেখছে।’
একইভাবে জম্মু-কাশ্মীরের ওপরও সবার নজর রয়েছে বলে উল্লেখ করেন পিডিপি নেত্রী।
নিজেদের অধিকার বা দাবি পূরণ করার জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নেয়া বা নিজেদের প্রাণত্যাগ করা কোনো সমাধান নয় বলেই মনে করেন তিনি।
এদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে দেশভাগের অভিযোগ এনে কংগ্রেস সরকারই ভালো ছিল বলে মনে করেন মুফতি।
তিনি বলেন, ‘ভারত বিভিন্ন ধর্ম, জাতি ও সম্প্রদায়ের দেশ। কংগ্রেস দেশকে একজোট করে রেখে রক্ষা করেছিল।
‘তবে গত পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে বিজেপি যা করছে, তা দেশভাগের চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।
‘ধর্মের নামে সাধারণ মানুষকে ভাগ করার চেষ্টা করছে বিজেপি। বিশেষ মর্যাদা দেয়ার শর্তেই ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর।
‘যদি ওই সময় বিজেপি ক্ষমতায় থাকত, তবে কখনোই ভারতের অংশ হতো না জম্মু-কাশ্মীর।’
এদিকে পিডিপি নেত্রীর এসব মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন রাজ্যের বিজেপি সভাপতি রবীন্দর রাইনা।
‘তিনি বলেন, ‘উনি ভুল ধারণায় বিশ্বাস করে রয়েছেন। ভারত শক্তিশালী দেশ এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতো নন, যিনি সেনা প্রত্যহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
‘তালেবান, আল-কায়েদা, লস্কর-ই-তৈয়বা বা হিজবুল- যারাই দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে, তাদেরই খতম করে দেয়া হবে।’
জম্মু-কাশ্মীরের মানুষদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন মেহবুবা মুফতি, এ অভিযোগ এনে রাইনা বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের মানুষরাও দেশপ্রেমী এবং দেশের জাতীয় পতাকাকে সব সময় শীর্ষে রেখেছেন তারা।
‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তারা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীকেও সহায়তা করে এসেছে।’
কাশ্মীরের মানুষের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েই মুফতি এ ধরনের কথা বলছেন বলেও অভিযোগ করেন রাইনা।
অন্যদিকে কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়বীর শেরগিলও পিডিপি নেত্রীর মন্তব্যের সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘মেহবুবা মুফতির মন্তব্য যথেষ্ট উসকানিমূলক।
‘শান্তি কামনার বদলে যদি শাসকদের সমালোচনা করার জন্য আপনাকে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হুমকি দিতে হয় এবং সহিংসতার ভয় দেখাতে হয়, তবে আপনি নিশ্চিতভাবে ভুল পথে হাঁটছেন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’