কাবুল বিমানবন্দর হয়ে আফগানিস্তান থেকে কূটনীতিক, নাগরিক ও বেসামরিক আফগানদের গণহারে সরিয়ে নেয়া এযাবৎকালের অন্যতম ‘জটিল এয়ারলিফট অপারেশন’। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াটির চূড়ান্ত ফলাফল অনিশ্চিত।
হোয়াইট হাউজ থেকে শুক্রবার দেয়া ভাষণে বাইডেন বলেন, আকাশপথে দ্রুততম সময়ে বিপুলসংখ্যক মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে অপসারণের এ অভিযানে প্রাণহানিরও ঝুঁকি রয়েছে।
প্রেসিডেন্টের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তান থেকে গত ছয় দিনে ১৩ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিহাসের অন্যতম বড় ও সবচেয়ে কঠিন উদ্ধারকাজ এটি।
বাইডেন বলেন, ‘কোনো ভুল ছাড়া এ কার্যক্রম পরিচালনা জটিল, বিপজ্জনক। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীগুলোও ঝুঁকিতে আছে। ভীষণ কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।
‘চূড়ান্ত ফল কী হবে, সে বিষয়ে এখনই আশ্বস্ত করা সম্ভব নয়। কোনো প্রাণহানি ছাড়াই উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হবে, এমন প্রতিশ্রুতিও দিতে পারছি না। কিন্তু কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে এটুকু বলতে পারি যে সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করব।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল বিমানবন্দরের কার্যক্রম।
উদ্ধারকৃতদের প্রাথমিকভাবে কাতারের একটি ঘাঁটিতে নিয়ে রাখা হচ্ছে। প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে কাতারের ঘাঁটিটিতে নতুন করে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছিল না বলে কাবুল থেকে নতুন করে কাউকে পাঠানোও সম্ভব হচ্ছিল না।
তবে বেশ কয়েক ঘণ্টা বিরতির পর কাবুল বিমানবন্দরে পুনরায় চালু হয় ফ্লাইটের ওঠানামা।
আফগানিস্তানের সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তালেবান গত রোববার রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর থেকেই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে নিতে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ। তাদের সঙ্গে যেকোনোভাবে বিমানে উঠতে মরিয়া হাজারো আফগান পরিবার।
বাইডেনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আফগানিস্তানে ফিরিয়ে আনায় কোনো রকম বাধা সৃষ্টি করছে না তালেবান। বিমানবন্দরগামীরা যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট দেখালে তাদের পথ রোধ করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
কিন্তু এর আগে এর সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন আইনপ্রণেতাদের জানান, আফগানিস্তান ছাড়তে চাওয়া আমেরিকানদের পেটাচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা। বিমানবন্দরে পৌঁছাতেও তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পলিটিকো।
আফগানিস্তানে তালেবানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাইডেন। এ সংকটের মধ্যে ছুটি সংক্ষিপ্ত করেছেন তিনি।
বাইডেন বলেন, ‘দেশে ফিরতে চাওয়া প্রত্যেক আমেরিকানকে ফিরিয়ে আমরা আনবোই।’
গত ২০ বছরে বিদেশি ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধে সহযোগিতা করা আফগান নাগরিকদের বিষয়েও একই আশ্বাস দেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। জানান, আমেরিকান নাগরিকদের অগ্রাধিকার দিয়ে তারপর প্রায় ৬৫ হাজার আফগান মিত্রকেও দেশ ত্যাগে সাহায্য করবে সেনারা।