কাবুলের নিয়ন্ত্রণ হারানোর দুই দিন পর আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ সংবিধান অনুযায়ী নিজেকে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন তিনি।
এক টুইট বার্তায় আমরুল্লাহ লেখেন, ‘আফগানিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতি, পালিয়ে যাওয়া, পদত্যাগ বা মৃত্যু হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হন। বর্তমানে আমি দেশেই আছি এবং আমিই বৈধ অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট। আমি সব নেতার সমর্থন পেতে এবং ঐক্য গড়ে তুলতে তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।’
নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণার আগে এক টুইট বার্তায় আমরুল্লাহ জানান, তালেবানের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ার ক্ষেত্রে তিনি কখনোই সাহস হারাবেন না। কোনো অবস্থাতে তালেবানের কাছে হার মানবেন না।
এ সময় আফগান জনগণকে তালেবানবিরোধী প্রতিরোধে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক এই প্রধান।
এদিকে, আমরুল্লাহ সালেহ যখন নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন তার ঠিক কিছুক্ষণ আগে তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও উপনেতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার কাতার থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহারে পৌঁছেছেন।
মোল্লা বারাদার তালেবান সরকারের প্রধান হিসেবে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
তালেবানের এক মুখপাত্র টুইটবার্তায় বলেন, ‘বারাদার ও তালেবানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল কাতার থেকে আজ দুপুরে প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমিতে পৌঁছান।’
রোববার রাজধানী কাবুল দখলের মাধ্যমে দীর্ঘ ২০ বছর পর আফগানিস্তানের পুরো নিয়ন্ত্রণ হাতে আসে তালেবানের।
তালেবানের ভয়ে আফগানিস্তান ছাড়ছে হাজার হাজার আফগান। অন্য দেশে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে সোম ও মঙ্গলবার কাবুল বিমানবন্দরে ভিড় করে শত শত মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্র ও যৌথ বাহিনীর সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার পর গত মে মাস থেকে দেশটিতে তালেবান যোদ্ধাদের বেড়ে যাওয়া সহিংসতা থেকে বাঁচতে সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে ভিড় করতে শুরু করে আফগান নাগরিকরা।
আফগান শরণার্থীদের জন্য সোমবার প্রতিবেশী দেশগুলোকে সীমান্ত খুলে দেয়ারও আহ্বান জানান নারী অধিকারকর্মী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই। নারীশিক্ষা নিয়ে কাজ করায় ধর্মভিত্তিক দল তালেবানের ভয়াবহ হামলার শিকার হন মালালা।
রাজধানী কাবুলসহ দেশের বড় ও প্রধান শহরগুলো দখলে কোনোরকম বাধার মুখেই পড়তে হয়নি তালেবান যোদ্ধাদের।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক হস্তক্ষেপে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে ছয় বছর আফগানিস্তান শাসন করেছে তালেবান। পুরো সময় ইসলামের বিধানের নামে কঠোর বিধিনিষেধ আর কট্টোর শাসন চাপিয়ে দেয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ ছিল ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক গোষ্ঠীটির ভূমিকা।
২০ বছর পর আবার তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সারা বিশ্ব। কিন্তু কেন? বিষয়টি উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এনপিআরের একটি প্রতিবেদনে।
যে কায়দায় গত ১০ দিনে রাজধানী কাবুলসহ বিভিন্ন প্রদেশ দখল করেছে তালেবান, তাতে স্পষ্ট যে, ২০ বছর আগের আর বর্তমানের তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য খুব একটা নেই।
অতীতে নারীদের শিক্ষাগ্রহণের অধিকার প্রত্যাখ্যান, বিরোধী মতাদর্শীদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, শিয়া হাজারাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও বামিয়ানে অমূল্য প্রাচীন পাথুরে বুদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করে দেয়াসহ নানা কারণে সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিল তালেবান।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হোসেন হাক্কানির মতে, এবারও যে তালেবান মানবিক মূল্যবোধের প্রশ্নে নতুন করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের চক্ষুশূল হবে না, তা ভাবার কোনো কারণ নেই।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারসহ কয়েকটি জায়গায় সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ যায় হাজারো মানুষের। হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে নিষিদ্ধঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তরে আফগানিস্তানের তৎকালীন শাসক দল তালেবানকে অনুরোধ করেছিল ওয়াশিংটন।
বিন লাদেন আফগানিস্তানে আত্মগোপনে বলে দাবি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের বুশ সরকার। যদিও পরবর্তীতে ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সেনা অভিযানে বিন লাদেন নিহত হন পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়।
দীর্ঘদিন ধরেই তালেবান, আল কায়েদাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মদদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে।