আফগানিস্তানে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিশ্বজুড়ে প্রবল সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় সাফাই গেয়েছেন বিদেশি সেনা প্রত্যাহার সিদ্ধান্তের।
হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুম থেকে টেলিভিশনে সোমবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন বাইডেন।
তিনি বলেন, ‘নিজের সিদ্ধান্তে আমি অনড়। ২০ বছরে এটাই শিখেছি যে আফগানিস্তান থেকে আমাদের সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো সঠিক সময় কখনোই আসতো না।’
আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের ব্যর্থতার জন্যও সমালোচনার ঝড়ের মুখে পড়েছে আন্তর্জাতিক জোটে নেতৃত্ব দেয়া যুক্তরাষ্ট্র।
কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর রোববার ‘আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ’ বলে ঘোষণা দেয় দেশটির সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তালেবান। সেদিনই দেশ ছেড়ে পালান ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি, তার বর্তমান অবস্থান অজানা।
এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে চলমান অরাজকতার মধ্যে বাইডেন জানান, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। হোয়াইট হাউজের ওয়েবসাইটে বাইডেনের বিবৃতির পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ করা হয়েছে।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপ এবং আফগান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের কথা মনে করিয়ে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমাদের ভূখণ্ডে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল, তার সঙ্গে জড়িতদের নির্মূল করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল। আফগানিস্তানকে ব্যবহার করে যেন আমাদের ওপর আর কোনো আক্রমণ না হয়, গত ২০ বছরে তা নিশ্চিত করেছি আমরা। এটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল।
‘আফগানিস্তানে জাতি গঠনের কোনো দায়িত্ব আমরা নিইনি। আজও আফগানিস্তানকে ঘিরে আমাদের স্বার্থ একটিই-আমেরিকান ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো।’
বর্তমানে উগ্রবাদীরা আফগানিস্তান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। জানান সোমালিয়ায় আল শাবাব, আরব উপদ্বীপে আল কায়েদা, সিরিয়ায় আল-নুসরা, ইরাক-সিরিয়ায় খেলাফত গড়তে চাওয়া আইএসের আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ার কথা।
এমন পরিস্থিতিতে স্থায়ী সামরিক উপস্থিতির বদলে এসব দেশে কার্যকর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে যুক্ত হওয়ার ওপরেও জোর দেন তিনি। বলেন, প্রয়োজনে আফগানিস্তানকেও ভবিষ্যতে এভাবে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
২০২০ সালে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী আফগানিস্তান থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ১৫ হাজার আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এরপরই দুই দশকে প্রথমে আফগানিস্তানে সবচেয়ে শক্তিশালী রূপে অবতীর্ণ হয় তালেবান। মাত্র তিন মাসে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এবং ১০ দিনে রাজধানীসহ দেশের ২২টির বেশি প্রাদেশিক রাজধানী ও প্রধান শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় গোষ্ঠীটি।
চুক্তিতে অস্ত্রবিরতির কথা উল্লেখ থাকলেও চলতি বছরের ১ মে থেকে কোনো অস্ত্রবিরতি তালেবান মানেনি বলে উল্লেখ করেন বাইডেন। বলেন, এ অবস্থায় সেনাদের সুরক্ষায় আর কোনো বিকল্প পথ ছিল না।
তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের রাজনৈতিক নেতারাই হাল ছেড়ে দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। লড়াই ছাড়াই অনেক জায়গায় আত্মসমর্পণ করেছে আফগান সেনারা। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সেনাদের আফগানিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনাই একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।’
কাবুলজুড়ে তালেবান যোদ্ধাদের বিজয় উদযাপনের মুখে রাজধানীর উপকণ্ঠে অবস্থিত দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশ ছাড়ার অপেক্ষায় হাজারো আফগান। কট্টরপন্থিদের শাসনে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। এমনই কয়েক শ মরিয়া আফগান নাগরিক গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক বিমান কাবুল ছাড়ার সময় সেটির সঙ্গে দৌড়াতে শুরু করেন।
নজিরবিহীন এমন আরও কিছু দৃশ্যের অবতারণা হয় বিমানবন্দর এলাকায়। হুড়োহুড়ি করে বিমানে ওঠার সময় পদদলিত হয়ে এবং উড়ন্ত বিমান থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে সাতজনের।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, টার্মিনালে প্রবেশে জনতাকে বাধা দিতে কাবুল বিমানবন্দরে কাঁটাতারের বেষ্টনী দিয়েছে তালেবান। আফগানদের এলাকাটি থেকে দূরে রাখতে গুলি ছুঁড়ে তাদের সতর্ক করা হচ্ছে।
কিছু সময়ের জন্য ফ্লাইট চলাচল স্থগিত থাকলেও পরে আবার বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর জেনারেল হ্যাংক টেইলর।