উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই সহিংসতার জেরে রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উত্তেজনা যাতে না বাড়ে, তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে।
জেলা প্রশাসনের জারি করা আদেশে বলা হয়, ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ইতোমধ্যে দাঙ্গা ও সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের দশেরা ও দুর্গাপূজার উৎসব ঘিরে জনসমাগমের কথা মাথায় রেখে বেরেলিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ ছাড়াও মোতায়েন করা হয়েছে প্রভিন্সিয়াল আর্মড কনস্ট্যাবুলারি (পিএসি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ)। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন এলাকায় নজরদারির জন্য ড্রোনও ব্যবহার করছে নিরাপত্তা বাহিনী।
বেরেলির পাশাপাশি শাহজাহানপুর, পিলিভিত ও বদায়ুঁ জেলা প্রশাসনকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার ভূপেন্দ্র চৌধুরী।
গত শুক্রবার ‘আই লাভ মোহাম্মদ’ পোস্টার ইস্যুতে একটি বিক্ষোভ ডেকেছিলেন প্রখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদ তৌকির রাজা খান। ওই ডাকে জুমার নামাজের পর কোটওয়ালি এলাকার একটি মসজিদের বাইরে প্রায় ২ হাজার মানুষ জড়ো হন। সেখানে হঠাৎ পুলিশের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনাও ঘটে।
ওই ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার শহরের সিবিগঞ্জ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘এনকাউন্টারে’ আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তারা চিকিৎসাধীন থাকলেও পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন।
তৌকির খান তার কয়েক সহযোগী, একজন আত্মীয়সহ বর্তমানে কারাগারে আছেন। পুলিশ এখন পর্যন্ত ১০টি এফআইআর দায়ের করেছে, যাতে ১৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও ২ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বিতর্কের সূত্রপাত হয় গত ৪ সেপ্টেম্বর ঈদে-মিলাদুন্নবীর মিছিলের সময়। কানপুরে মিছিলের পথে একটি তাঁবুতে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা পোস্টার ঝোলানো হয়েছিল। স্থানীয় হিন্দু সংগঠনগুলো অভিযোগ তোলে, ওই জায়গাতেই রামনবমীর মতো হিন্দু উৎসব হয়। তাই এই পোস্টার ইচ্ছাকৃতভাবে দেওয়া হয়েছে।
এরপর থেকে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হিন্দু সংগঠনগুলোর দাবি, তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে মুসলিমরা অভিযোগ করেন, নবীজির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করায় তাদের টার্গেট করা হচ্ছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
কয়েক সপ্তাহ পর বারানসিতে পাল্টা কর্মসূচি শুরু হয়। ধর্মীয় নেতারা ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ পোস্টারের প্রতিবাদে ‘আই লাভ মহাদেব’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করেন। তারা দাবি করেন, উসকানিমূলক পোস্টারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে।