কলকাতার পূজা পরিচালনায় এতদিন একচেটিয়া আধিপত্য ছিল পুরুষের। তাতে ভাগ বসিয়ে ইতিহাস গড়েছেন চার নারী। তাদের নেতৃত্বে হবে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীর এবারের দুর্গাপূজার আয়োজন।
দক্ষিণ কলকাতার ৬৬ পল্লী দুর্গাপূজা কমিটি জানিয়েছে এমন তথ্য।
দুর্গাপূজায় ৬৬ পল্লী কমিটি প্রতিবারই মণ্ডপে নতুনত্ব আনে। এবার করোনাভাইরাসের কারণে বাজেট খুব কম বলে মণ্ডপসজ্জা, আলোকসজ্জায় চমক দেয়ার সুযোগ কম। তবে নারী পুরোহিত এনে কমিটি একটি চমক ঠিকই দিয়েছে।
কোথা থেকে এলো নারী পুরোহিতের ধারণা
গত বছরের দুর্গোৎসব শেষে ৬৬ পল্লীর প্রধান পুরোহিত তরুণ ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয়। এর পর নতুন পুরোহিতের সন্ধানে নামে পূজা কমিটি। পুরোহিত খুঁজতে গিয়ে তাদের মাথায় আসে উইন্ডোজ প্রোডাকশনের নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ সিনেমার কথা।
সিনেমাটি নির্মাণ হয় নারী পুরোহিত নন্দিনী ভৌমিকের জীবন অবলম্বনে। এতে পৌরোহিত্যে পুরুষদের একচেটিয়া আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করেন এক নারী।
৬৬ পল্লী দুর্গাপূজা কমিটির কর্তাব্যক্তিদের পক্ষ থেকে ওই সিনেমার প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সে যোগাযোগে তারা জানতে পারেন শুভমস্তু নামের নারী পুরোহিতদের একটি সংগঠনের কথা।
চার নারী নন্দিনী, সেমন্তী, রুমা ও পৌলোমীকে নিয়ে এ সংগঠন। তারা বিয়ে, অন্নপ্রাশন, গৃহপ্রবেশ ও পারলৌকিক অনুষ্ঠান করে থাকলেও কখনো দুর্গাপূজার মতো বড় অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেননি। এ কারণে ৬৬ পল্লীর পূজা প্রস্তাব প্রাথমিকভাবে নাকচ করে দেয় শুভমস্তু।
পরে পূজা কমিটির নাছোড় মনোভাবে রীতিমতো প্রস্তুতি নিয়ে ৬৬ পল্লীর দুর্গাপূজার পৌরোহিত্য করার বিষয়ে সম্মতি জানান ওই সংগঠনের প্রধান নন্দিনী।
পৌরোহিত্য নিয়ে কী বলছেন নন্দিনী
নারী পুরোহিত, গবেষক ও অধ্যাপক নন্দিনী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, পূজো করার অধিকার আমাদেরও রয়েছে। আমাদের এমন প্রয়াসে মেয়েরা যেন একটু সাহস পায়।
‘মেয়েরা এত বড় বড় চাকরি করছে। সব জায়গায় মেয়েরা কত এগিয়ে গেছে। পাহাড়ে উঠছে; বিমান চালাচ্ছে। কিন্তু নারী নির্যাতন কমছে না। সমাজ যাতে একটু হলেও বদলায়, আমাদের কাজ দিয়ে সেই বার্তাটাই দিতে চাইছি।’
দুর্গাপূজা কমিটির ভাষ্য
৬৬ পল্লী দুর্গাপূজা কমিটির কর্মকর্তা প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বাড়িতে তো নারীরাই পূজার জোগাড় করেন। যে প্রতিমা পূজা হয়, তিনিও একজন নারী। তাহলে নারীরা পৌরোহিত্য করতে পারবেন না কেন?
‘আজকাল নারী ঢাকিরা ঢাক বাজাচ্ছেন। আমরা অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম। খোঁজখবর করতে গিয়ে দেখি, পশ্চিমবঙ্গে নারী পুরোহিতরা আগের থেকে অনেক বেশি সক্রিয়।’