ভারতের সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের শুরু থেকেই এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সংসদের দুই কক্ষ। বুধবার রাজ্যসভায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। বিরোধীরা অভিযোগ করেন, বাইরে থেকে লোক এনে সাংসদদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে।
এদিন নির্ধারিত সময়ের আগেই মুলতুবি হয়ে যায় বর্ষাকালীন অধিবেশন। আর বৃহস্পতিবার সংসদের সেই ঘটনারই সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছে। সরকারি সূত্র থেকে ওই ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে সাংসদের সঙ্গে মার্শালদের হাতাহাতি চলছে। তবে কারা তাদের ওপর চড়াও হয়েছেন সেটি ভিডিওতে স্পষ্ট নয়।
বিরোধীদের অভিযোগ, বহিরাগতদের মার্শালের পোশাক পরিয়ে আনা হয়েছিল। আড়াই মিনিটের এই ভিডিওতে দেখা গেছে বেশ কয়েকজন নারী সাংসদ এবং মার্শাল হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের ঘিরে বেশ কয়েকজন সাংসদ স্লোগান দিচ্ছেন।
এছাড়া কিছু কাগজপত্র ছিঁড়ে চেয়ারম্যানের চেয়ার লক্ষ্য করে ছোঁড়া হচ্ছিল। কয়েকজনকে ওয়েলে নেমে টেবিলের ওপর উঠে দাঁড়াতেও দেখা গেছে।
রাজ্যসভায় সাধারণ বীমা সংশোধনী বিল পেশ হওয়ার পরই এ ঘটনা ঘটে।
বিরোধীদের দাবি ছিল সিলেক্ট কমিটির কাছে এই বিল পাঠাতে হবে। বিরোধীরা যখন বিরোধিতা করছেন, তার মধ্যেই পাস হয়ে যায় ওই বিল।
বুধবার রাজ্যসভায় এই বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বিরোধীরা দাবি করেন, বৃহস্পতিবারও বিলটি পেশ করা যেতে পারে। বিরোধীদের ওই আপত্তি শোনা হয়নি। আর সেটি নিয়েই শুরু হয় তুমুল হট্টগোল।
বিরোধীরা দাবি করেন, নরেন্দ্র মোদি সরকার শিল্পপতিদের স্বার্থে এই বিল এনেছে। এসময় সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে দিতে ওয়েলে নেমে পড়েন তারা। প্রায় ৫০ জন নারী ও পুরুষ নিরাপত্তারক্ষী মিলে কার্যত ‘চেয়ার’ ঘিরে ফেলেন।
এই ইস্যুতেই বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ওই মিছিলে ছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে, এনসিপির শরদ পাওয়ার, শিবসেনার সঞ্জয় রাউতসহ প্রায় সমস্ত বিরোধী দলের নেতারা।
কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, রাজ্যসভার ইতিহাসে বহিরাগতদের এনে সাংসদদের মারা, ধাক্কা দেয়ার ঘটনা প্রথমবারের মতো ঘটল।’
এদিন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গে দেখাও করেন বিরোধীরা।
এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি সংসদকে অপমান করেছে বলে অভিযোগ তোলেন তৃণমূল নেতারা৷
এদিন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘শাসকদল বিজেপি সংসদকে বারবার অপমান করছে৷ এর বিরুদ্ধেই বিরোধীরা প্রতিবাদ করছে৷ ওবিসি বিলে দুটো হাউসে শান্তিপূর্ণ বিতর্ক হয়েছে৷’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সংসদে অনুপস্থিত থাকার প্রসঙ্গ টেনে এদিন সৌগত রায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এক মিনিটের জন্যও লোকসভায় আসেননি৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও আসেননি৷ তারা দুজনেই সংসদের সদস্য৷ এটা লজ্জাজনক৷
‘দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা ছিল৷ পেগাসাস ও এনএসও ফোনে আড়ি পাতার ব্যবস্থা করেছে৷ বিচারপতি, সাংবাদিক, নেতাদের ফোনে আড়িপাতা হয়েছে৷ সেটি নিয়ে আলোচনা করতে দেয়নি৷’
কৃষি আইন নিয়েও সংসদে আলোচনা চেয়েছিল বিরোধীরা। সৌগত রায়ের অভিযোগ বিরোধীদের সেই দাবিকেও পাত্তা দেয়নি কেন্দ্র৷
বুধবার বিরোধীদের আচরণে কষ্ট পেয়েছেন বলে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু। এদিন অধিবেশনের শুরুতে কথা বলতে গিয়ে তার চোখে জল চলে আসে।
মঙ্গলবারের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গতকাল বিরোধীরা কেউ টেবিলে ওপর বসে, কেউ দাঁড়িয়ে যে আচরণ করেছেন, তাতে আমি ব্যথিত।’
তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি।’
যদিও বিরোধীদের তুমুল হট্টগোলের মধ্যেই বাদল অধিবেশনে একের পর এক বিল পাশ করিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ আলোচনা ছাড়াই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে পাত্তা না দিয়েই ওই বিল পাশ করিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সৌগত রায়৷
তিনি বলেন, ‘লোকসভায় ২০টি ও রাজ্যসভায় ১৯টি বিল পাশ হয়েছে৷ বিল পাশে দশ মিনিট করে সময় লেগেছে৷ এটা কি সংসদীয় গণতন্ত্র? সংসদে আলোচনা ছাড়াই আইন পাশ হবে? সংসদের সদস্যরা মত দিতে পারবেন না?’