আফগানিস্তানে অবস্থানরত আমেরিকানদের অবিলম্বে দেশটি ত্যাগের আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দ্রুত আফগানিস্তান ত্যাগে বাণিজ্যিক ফ্লাইট ধরার পরামর্শ দিয়েছে রাজধানী কাবুলে অবস্থিত আমেরিকান দূতাবাস।
কোনো নাগরিকের টিকিট কেনার আর্থিক সক্ষমতা না থাকলে তাকে দেশে ফিরতে সহযোগিতা করতে প্রত্যাবাসন ঋণও দেবে দূতাবাস।
আমেরিকান দূতাবাস থেকে শনিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তা পরিস্থিতির চরম অবনতি ও কম লোকবলের কারণে নাগরিকদের সহযোগিতা করার ক্ষমতা ‘অত্যন্ত সীমিত’।
এর আগে শুক্রবার আফগানিস্তানে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্যও একই ধরনের সতর্কতা জারি করে যুক্তরাজ্য।
আফগানিস্তানের বিভিন্ন শহরে দেশটির সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তালেবানের আগ্রাসন বাড়ছে। গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তসহ দেশের অর্ধেকের বেশি জেলা ও দুটি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নিয়েছে তালেবান। কাবুলে হত্যা করেছে আফগান সরকারের মুখপাত্রকে।
মে মাস থেকে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাবুলের আমেরিকান দূতাবাসের সরকারি কর্মীরা অন্য কোথাও কাজের সুযোগ পেলে তাদের আফগানিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আফগান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সপ্তাহব্যাপী রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর শুক্রবার নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী জারাঞ্জ ও শনিবার জওজান প্রদেশের রাজধানী শেবারঘান শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয় তালেবান যোদ্ধারা।
শহরে পুলিশের প্রধান কার্যালয়, গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়, প্রাদেশিক গভর্নরের কার্যালয়সহ প্রায় সব সরকারি ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে গোষ্ঠীটি। শেবারঘানের বাইরে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটি এখন শুধু আফগান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জওজান প্রদেশের আইনপ্রণেতা হালিমা সাদাফি করিমা বলেন, ‘বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে হামলা চালাতে শুরু করেছে তালেবান। বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না।’
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে হওয়া শান্তিচুক্তি বাতিলের আভাস দিয়েছে তালেবান। আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে গোষ্ঠীটি।
চলমান পরিস্থিতিতে রাজধানী কাবুলকে সুরক্ষিত রাখতে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি সামরিক পরিস্থিতি ঘোষণা করতে পারেন বলে কিছু সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির নেতৃত্বাধীন জোটের সেনা প্রত্যাহারের সুযোগে আফগানিস্তানের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে তালেবান। আফগান ভূখণ্ডের ৮৫ শতাংশই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেছে গোষ্ঠীটি।
দাবির সত্যতা নিয়ে নিশ্চিত না হলেও তালেবান আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পথে কৌশলগত বিজয় অর্জন করেছে বলে গত মাসেই জানান যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা মার্ক এ মাইলি।