তিউনিসিয়ায় নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সাবেক উপদেষ্টা রিধা গারসালাওউইকে সাময়িকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তিনি এ নিয়োগ দেন বলে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ওই দিনই তিউনিসিয়ার সংবিধানের ৮৯ ধারা অনুযায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রিধা শপথ নেন। প্রেসিডেন্ট সাইদ তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিউনিসিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন মন্ত্রী একসময় দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাও ছিলেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসসহ অন্য শহরে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে।
বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট বিলুপ্তিরও আহ্বান জানায়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রী হিচেম মেচিচিকে বরখাস্ত করেন তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট সাইদ।
পাশাপাশি এক মাসের জন্য দেশের পার্লামেন্টের কার্যক্রমও স্থগিত করেন তিনি।
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়ে সাইদ বলেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ার চেষ্টা করছেন। তিউনিসিয়া কোনো পাপেট রাষ্ট্র নয়।
‘ঐতিহাসিক এ মুহূর্ত আমাকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশবাসীসহ পুরো বিশ্বকে আমি বলতে চাই, সংবিধান অনুযায়ী কাজ করতে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ। জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষায় আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
‘কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। কোনো নাগরিক অধিকারবঞ্চিত হয়নি। আইন অনুযায়ীই দেশ চলছে।’
নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের পাশাপাশি দেশে বিরাজমান সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে তিউনিসিয়ার জনগণ।
তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট সাইদের সমর্থকরা তার এক সপ্তাহের ভেতরে নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
গত ১০ বছর ধরে তিউনিসিয়ার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতিবাচক পদক্ষেপে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অচলাবস্থা থেকে মুক্তি চাইছিলেন অনেকে।
ওই দল জাতীয় স্বার্থের চেয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধার দিকেই বেশি নজর দেয় বলে মত সাইদের সমর্থকদের।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, গণতন্ত্রের পথে ফিরতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রেসিডেন্ট সাইদকে আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি পার্লামেন্টের কার্যক্রম ফের শুরুরও তাগিদ দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী মেচিচিকে বরখাস্তের পরে তিউনিসিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিচারমন্ত্রীকে পদ থেকে সরান প্রেসিডেন্ট সাইদ।
এ ছাড়া তিউনিসিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধান প্রসিকিউটরসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়।
বুধবার দেশটির জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেল ওয়াতানিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পদ থেকে সরান সাইদ।
এ ছাড়া আইনপ্রণেতাদের দায়মুক্তির সংসদীয় বিধানও তুলে নেন প্রেসিডেন্ট সাইদ।
মঙ্গলবার থেকে টানা এক মাসের কারফিউর ঘোষণা দেন একসময়ের আইন বিষয়ের প্রভাষক সাইদ। সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত এ কারফিউ বলবৎ থাকবে।
প্রেসিডেন্ট সাইদের এসব পদক্ষেপকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে নিন্দা জানায় ইসলামপন্থি দলসহ তিউনিসিয়ার বিরোধী দলগুলো।
তবে সাইদ পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ীই পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি।
২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে বিদেশিদের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার অভিযোগে তিউনিসিয়ার তিন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সাইদ।
১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ তিউনিসিয়ায় করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
১০ বছর আগে তিউনিসিয়ায় বিপ্লবের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সূচনা হয়। পুরো অঞ্চলে ‘আরব বসন্ত’ ছড়িয়ে পড়ার পেছনে উত্তর আফ্রিকার দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
তবে বিপ্লবের মাধ্যমে তিউনিসিয়ায় কর্মসংস্থান ও সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টিতে জনগণের আশা দ্রুতই ধূলিসাৎ হয়।
এক দশক ধরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তিউনিসিয়া।
সম্প্রতি করোনার প্রাদুর্ভাব দেশটির পরিস্থিতি আরও বিপর্যস্ত করে তোলে।