পাকিস্তানে আফগান রাষ্ট্রদূতের মেয়ে অপহরণের অভিযোগের কোনো প্রমাণ তদন্তে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বলে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছিল, ইসলামাবাদে রাষ্ট্রদূত নাজিব আলিখিলের মেয়ে সিলসিলা আলিখিল ট্যাক্সিতে বাসায় ফিরছিলেন। ওই সময় তাকে অপহরণ করে কয়েক ঘণ্টা বন্দি রাখা হয়। ওই সময় সিলসিলাকে ‘অজ্ঞাত লোকজন ভয়ঙ্কর নির্যাতন’ করা হয়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পরে এক বিবৃতিতে জানায়, সিলসিলাকে বন্দি অবস্থায় নির্যাতন করা হয়। রাষ্ট্রদূত নাজিব ও তার পরিবারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
তবে মঙ্গলবার রাষ্ট্রদূতের মেয়ে অপহরণ হওয়া নিয়ে আফগানিস্তানের বক্তব্যে সন্দেহ পোষণ করে পাকিস্তান।
সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ বলেন, ‘অপহরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তদন্তকারী কর্মকর্তা ৭০০ ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছেন। এ ছাড়া দুইশোর মতো ট্যাক্সি তল্লাশি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নামে কুৎসা রটাতে এ কাজ করা হয়েছে। রাষ্ট্রদূতের মেয়ের বক্তব্যের সঙ্গে আমাদের অনুসন্ধানের বিস্তর পার্থক্য।’
আফগান রাষ্ট্রদূতের মেয়ে সিলসিলাকে তদন্তে সহায়তারও আহ্বান জানান পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
নিরাপত্তা বিবেচনায় রোববার পাকিস্তান থেকে নাজিবসহ জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে আফগানিস্তান।
দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ টুইটবার্তায় বলেন, ‘আফগান রাষ্ট্রদূতের মেয়ে অপহরণ ও বন্দি অবস্থায় তাকে নির্যাতন, আমাদের দেশের মর্যাদায় আঘাত হেনেছে। আমাদের জাতীয় মর্যাদাকে নির্যাতন করা হয়েছে।’
পর দিন সোমবার আফগান সরকারের সিদ্ধান্তে দুঃখপ্রকাশ করে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে সে সময় বলা হয়, সিলসিলা আলিখিলকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পাকিস্তান থেকে রাষ্ট্রদূতসহ জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক প্রত্যাহারে আফগানিস্তানের সিদ্ধান্ত দুঃখজনক ও অনুশোচনীয়। আশা করছি, আফগান সরকার তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।’
প্রতিবেশী দুই দেশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে শীতল সম্পর্ক চলছে।
পাকিস্তান তালেবান যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ আফগানিস্তানের। অন্যদিকে পাকিস্তানের অভিযোগ, দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে সশস্ত্র বিভিন্ন সংগঠনকে নিজের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দিচ্ছে আফগানিস্তান।
আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়ায় পাকিস্তান নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলেও সম্প্রতি মন্তব্য করেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইমরান খান তখন বলেছিলেন, ‘তালেবানকে শান্তি আলোচনায় বসাতে পাকিস্তানের মতো কোনো দেশ এত পরিশ্রম করেনি।
‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। আফগানিস্তানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে তালেবানকে শান্তি আলোচনায় রাজি করাতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। আফগানিস্তানে এখন যা হচ্ছে, তার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা খুবই অন্যায়।’