২০২০ সালে ডিপথেরিয়া-টিটেনাস-হুপিং কাশির (ডিটিপি) সম্মিলিত টিকার প্রথম ডোজ থেকে বঞ্চিত শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ায় ভারত বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৩০ লাখ শিশু বেসিক টিকাগুলো থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট বাধার কারণে গত বছর রুটিন টিকাদান পরিষেবাগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব কতটা পড়েছে, তা উঠে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই তথ্যে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২০ সালে ভারতে প্রায় ৩০ লাখেরও বেশি শিশু ডিটিপি-১ টিকা পায়নি। বিশ্বের প্রায় ২ কোটিরও বেশি শিশু এই প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ পায়নি। যদিও এই তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পরই ভারত সরকার এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সরকারের দাবি, করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি সার্বিক টিকাদান কর্মসূচিও চালু রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০২১-এর প্রথম তিন মাসেই ডিটিপি-৩ ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৯৯ শতাংশ পূরণ হয়েছে। যদিও সরকারের তরফে এই দাবির সত্যতা প্রমাণে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ডিপথেরিয়া-টিটেনাস-হুপিং কাশি ভ্যাকসিনকেই একযোগে ডিটিপি-১ ভ্যাকসিন বলা হয়। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৬০টি দেশের টিকাদানের তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, অধিকাংশ দেশই শিশুদের টিকাদান ব্যাপক হারে কমেছে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে।
শিশুদের মূলত যে ১৩টি রোগের জন্য টিকা দেওয়া হয়, তা নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ক্যাম্পের মাধ্যমে দেওয়া হত। করোনা সংক্রমণের প্রভাবে প্রায় ২ কোটিরও বেশি শিশু সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই আবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকে, যেখানে গিয়ে টিকা দেয়া কার্যত অসম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গেব্রিয়াসুস জানান, বিশ্বের নানা দেশে করোনার টিকা দেয়া শুরু হলেও বাকি প্রয়োজনীয় টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে তারা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। এর ফলে পোলিও, হাম, মেনিনজাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “করোনাকালে এই পরিস্থিতিতে যদি একাধিক রোগের সংক্রমণ শুরু হয়, তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সেই কারণেই দেশগুলোকে দ্রুত শিশুদের টিকাকরণ কর্মসূচিগুলো পুনরায় শুরু করতে হবে।’
জানা গেছে, বর্তমানে ৬৬টি দেশে ৫৫ ধরনের গণটিকাদান কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে করোনা সংক্রমণের কারণে। এরফলে পোলিও, হলুদ জ্বরের মতো রোগ বিশ্বে আরও প্রভাব ফেলবে। বিগত বছরের তুলনায় ২০২০ সালে যেমন ৩৫ লাখ শিশু ডিটিপি-১ ভ্যাকসিন পায়নি, তেমনই ৩০ লাখেও বেশি শিশু হামের টিকা পায়নি।
ইউনিসেফ-র এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর হেনরিয়েটা ফোরে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ ও তার ফলে আমাদের স্বাভাবিক জনজীবন যেভাবে ব্যাহত হয়েছে, তাতে আমাদের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। পরিস্থিতি আগেই খারাপ ছিল, করোনার ফলে তা আরও খারাপ হয়েছে।’
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ডিটিপি-১ ভ্যাকসিন না পাওয়া শিশুর সংখ্যা বাড়ার হারের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে ভারত। ভারতের পরেই রয়েছে পাকিস্তান, যেখানে এক বছরে টিকা না পাওয়া শিশুর সংখ্যা ৫ লাখ ৬৭ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেই টিকা না পাওয়া শিশুর সংখ্যা সব থেকে বেশি বেড়েছে। এর প্রধান কারণ হল অর্থাভাব ও ভুল তথ্য। ডিটিপি-৩ পাওয়ার হারও ৯১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৮৫ শতাংশে নেমে এসেছে। হামের টিকার হার ৭১ শতাংশ থেকে কমে গিয়েছে ৭০ শতাংশে, যেখানে হাম দূরীকরণে প্রয়োজন ৯৫ শতাংশ টিকাকরণ।