ভারতের সংসদে বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে সোমবার। সরকার ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ নতুন বিল এই অধিবেশনে পেশ করার জন্য তৈরী রেখেছে। এর মধ্যে তিনটি বিল সম্প্রতি জারি করা অর্ডিন্যান্সকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া সম্পর্কিত।
অধিবেশনে লোকসভার ৩৮টি বিল আলোচনা ও পাস করানোর জন্য লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। অন্যদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা, কৃষক আন্দোলন এবং জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সংসদের উভয় কক্ষে সোচ্চার হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধীদলগুলো।
এবার অধিবেশনে মহিলা আসন সংরক্ষণ বিল আনার দাবিতে সরব হবে তৃণমূল কংগ্রেস।
সোমবার শুরু হওয়া বর্ষাকালীন অধিবেশন চলবে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত। কোভিড-১৯ প্রটোকল মেনে অধিবেশন চালানোর প্রস্তুতি আগেই সম্পন্ন হয়েছে। লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা গত শুক্রবার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেছেন। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সংসদীয় নেতাদের কাছে অধিবেশন সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন।
উপ-রাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এম বেঙ্কইয়া নাইডু সংসদের সকল সদস্যের অনুরোধ করেছেন করোনাকালে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের সমস্যার কথা সংসদ অধিবেশনে তুলে ধরতে।
করোনাকালে অধিবেশন হওয়ার দরুণ লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্য, সংসদের সীমীত সংখ্যক আধিকারিক ও কর্মীদের নিয়ে বর্ষাকালীন অধিবেশন করা হবে। জিরো আওয়ার ও প্রশ্নোত্তর পর্ব মিলিয়েই সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অধিবেশনের সময় রাখা হয়েছে। বাজেট অধিবেশনের মতো সময়ে কাটছাট করা হয়নি।
সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী জানান, বিনা বাধায় যাতে অধিবেশন সম্পন্ন করা যায়, সেজন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের একযোগে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সরকারের তরফেও বলা হয়েছে, বিরোধীদের সমস্ত ইস্যু নিয়েই তারা কথা বলতে প্রস্তুত।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে বিপুল জয়ে উজ্জীবিত তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এবার প্রস্তুতি রয়েছে বর্ষাকালীন অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণের। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী মোদি যেসব ব্যাঙ্গাত্মক উক্তি করেছেন, তার জবাব দিতে প্রস্তুত তৃণমূল সাংসদরা। মহিলা সংরক্ষণ বিল আনারও দাবি তোলা হবে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে।
মহিলা সংরক্ষণ বিল ১৯৯৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রথমবার লোকসভায় পেশ করে এইচডি দেবগৌড়ার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকার। পরে বাজপেয়ি সরকারও সেই বিলটি লোকসভায় পাস করানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ২০০৮-এ ফের বিলটি লোকসভায় পেশ করে ইউপিএ-১ সরকার। ২০১০ সালের ৯মার্চ বিলটি রাজ্যসভায় পাস হলেও লোকসভায় বকেয়া পড়ে থাকে। তৃণমূলের দাবি, দ্রুত বিলটি পুনরায় এনে পাস করানো হোক।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে উত্তরপ্রদেশে যে ছবি দেখা গিয়েছে, তার নিন্দা হয়েছে বিশ্বজুড়ে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে অক্সিজেনের অভাব, হাসপাতালে শয্যার অভাব, রেমডিসিভির ইঞ্জেকশনের অভাব থেকে শুরু করে গঙ্গার পাড়ে বালিতে পুঁতে রাখা দেহের ছবি। সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে অধিবেশনে সরব হবে তৃণমূল কংগ্রেস।
সংসদ অধিবেশনের আগে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী দলের সংসদীয় গ্রুপে কিছুটা রদবদল এনেছেন। গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ‘জি-২৩’ গোষ্ঠীর নেতাদের। গত বছর কংগ্রেসের যে ২৩জন নেতা সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখে দলের কাজকর্মের সমালোচনা করেছিলেন। সেসব রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ‘জি-২৩’ বলে পরিচিতি পেয়েছেন।
কংগ্রেসের নব গঠিত সাতজনের সংসদীয় গ্রুপে রাখা হয়েছে শশী থারুর ও মনীষ তিওয়ারিকে। অধীর রঞ্জন চৌধুরী লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা থাকবেন, আর প্রয়াত তরুন গগৈয়ের ছেলে গৌরব গগৈ উপ-নেতার পদেই থাকবেন । রাজ্যসভায় কংগ্রেসের নেতা থাকছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং উপ-নেতা থাকবেন আনন্দ শর্মা।