বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইসরায়েলের কৌশলের কারণে যেভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৪ আগস্ট, ২০২৫ ১০:৩৬

ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। বিশ্বের চোখের সামনে গাজায় যে দুর্ভিক্ষ চলছে, তা ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়’ নয়, বরং যুদ্ধনীতির ফসল। খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার এবং সহায়তায় বাধা সৃষ্টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবল নিন্দার জন্ম দিয়েছে। সীমান্তের বাইরে শত শত ট্রাক মানবিক সহায়তা অপেক্ষমাণ থাকলেও ফিলিস্তিনিরা পাচ্ছেন না খাদ্য। জাতিসংঘের সহায়তায় পরিচালিত বিশ্বের শীর্ষ ক্ষুধা পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বলছে, গাজার মানুষ এখন দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত। এটি মোট ফিলিস্তিনি জনগণের এক-চতুর্থাংশ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

‘মানবসৃষ্ট বিপর্যয়’

আইপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে গাজা সিটিতে মানুষ দুর্ভিক্ষজনিত ক্ষুধা, চরম অভাব ও মৃত্যুর মুখে পড়েছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর নাগাদ গাজার বৃহত্তর অংশে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে। সংস্থাটির মতে, এ সংকট সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট এবং প্রধান বাধা তৈরি করছে ইসরায়েলের খাদ্য সরবরাহে পরিকল্পিত নিয়ন্ত্রণ।

তিনটি সূচকের ভিত্তিতে আইপিসি দুর্ভিক্ষ চিহ্নিত করে থাকে। সেগুলো হলো:

ক্ষুধা: অন্তত পাঁচ ভাগের এক ভাগ পরিবার মারাত্মক খাদ্য সংকটে।

পুষ্টিহীনতা: প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।

মৃত্যু: প্রতিদিন প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে দুইজন অনাহার বা অপুষ্টিজনিত রোগে মারা যাচ্ছে।

যখন এই তিনের মধ্যে দুটি সূচক মিলে যায়, তখনই দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। আইপিসি বলছে, তথ্যসংগ্রহ ব্যাহত হলেও বিদ্যমান প্রমাণ ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে মৃত্যুহারও এই সীমা অতিক্রম করেছে।

গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অপুষ্টিতে আরও দুজন মারা গেছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৭৩ জনে, যার মধ্যে ১১২ শিশু।

ইসরায়েলের অস্বীকার

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার দাবি করেছেন, গাজায় কোনও দুর্ভিক্ষ নেই। তিনি দোষ চাপিয়েছেন ত্রাণ সংস্থা ও হামাসের ওপর। ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, শত শত ট্রাক সীমান্তে পড়ে আছে। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তা সংগ্রহ করছে না।

তবে জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার স্পষ্ট করে বলেছেন, দুর্ভিক্ষের সরাসরি কারণ ইসরায়েলের ‘পদ্ধতিগত বাধা’। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও বলেছেন, দখলদার শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনে গাজার খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা ইসরায়েলের দায়িত্ব।

অবরোধ ও বিতর্কিত ত্রাণ ব্যবস্থা

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস হামলার পর থেকে গাজার ওপর ইসরায়েলি অবরোধ কঠোর হয়। ২০২৫ সালের মার্চে প্রায় তিন মাসের জন্য পূর্ণ অবরোধ চালু হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মে মাসে ইসরায়েল সীমিত পণ্য প্রবেশের অনুমতি দেয়। তবে জাতিসংঘের পরিবর্তে বিতরণ ব্যবস্থার দায়িত্ব দেওয়া হয় মার্কিনভিত্তিক বিতর্কিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইএফ)-কে। এই সংস্থার মাত্র চারটি বিতরণকেন্দ্র গড়ে তোলা হয় সামরিকায়িত এলাকায়, যেখানে পৌঁছাতে ফিলিস্তিনিদের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘপথ হেঁটে যেতে হয়। এর আগে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ৪০০ কমিউনিটি-ভিত্তিক কেন্দ্র থেকে খাদ্য বিতরণ হত।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, মে থেকে এখন পর্যন্ত জিএইচএফ কেন্দ্রের আশপাশে সহায়তা নিতে গিয়ে অন্তত ৯৯৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মোট নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৭৬০ ছাড়িয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসকেরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে এসব মৃত্যু ঘটেছে।

সীমিত শিথিলতা, অপ্রতুল ত্রাণ

জুলাই থেকে ইসরায়েল কিছুটা বেশি ট্রাক প্রবেশ করতে দিচ্ছে এবং ‘কৌশলগত বিরতি’ দিয়ে কনভয় চলাচলের সুযোগ তৈরি করছে। বাজারে কিছু পণ্যের দামও কিছুটা কমেছে। তবে অনেক ফিলিস্তিনিদের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে খাদ্য। কখনও আটা কেজিপ্রতি ৮৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, গাজার জনগণের মৌলিক চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক ঢোকা দরকার। বাস্তবে এর অর্ধেকের বেশি প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি আকাশ থেকে খাদ্য ফেলার অনুমতি দেওয়া হলেও মানবিক সংস্থাগুলো এটিকে অকার্যকর ও বিপজ্জনক বলছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক বলেছেন, ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে যুদ্ধাপরাধ। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি একে বলেছেন ‘নৈতিক কলঙ্ক’।

এদিকে ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, আইপিসি হামাসের প্রচারণা অনুসারে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ইসরায়েলি সেনাদের সমন্বয় সংস্থা কোগাট প্রতিবেদনে ব্যবহৃত তথ্যকে ‘ভুয়া ও পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে দাবি করেছে। তবে আইপিসি জানিয়েছে, তারা বহুদিনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডই ব্যবহার করেছে।

গাজা সিটিতে অভিযান

এই অবস্থার মধ্যেই ইসরায়েল গাজা সিটিতে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করতে রিজার্ভ সেনাদের তলব করেছে। নেতানিয়াহুর মতে, হামাসকে পরাজিত করা, যুদ্ধের সমাপ্তি এবং জিম্মিদের মুক্তিই এ পদক্ষেপের লক্ষ্য।

কিন্তু জাতিসংঘসহ মানবিক সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে, এতে গাজা সিটির অন্তত ১০ লাখ মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হবেন। ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছে, দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকায় এমন অভিযান চালানো হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। বিশেষ করে অসুস্থ, শিশু ও বয়স্করা পালাতে পারবেন না।

এ বিভাগের আরো খবর