সিরিয়ায় এক সময়ে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দেয়া ছয় নারীকে ফিরিয়ে নিয়েছে বেলজিয়াম। সঙ্গে নেয়া হয়েছে তাদের ১০ সন্তানকেও।
সিরিয়ায় জিহাদিদের একটি বন্দিশিবিরে আটক ছিলেন এই নারীরা।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক জোটের অভিযানে আইএসের পতনের পর গোষ্ঠীটির বিদেশি সদস্যদের সবচেয়ে বড় প্রত্যাবাসন এটি।
আইএসে যোগ দিয়েছে সিরিয়ায় গিয়েছিলেন নারী ও শিশুসহ ইউরোপের হাজারো তরুণ। আইএসের পরাজয়ের দুই বছর পেরোনোর পর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দি নিয়ন্ত্রিত বন্দিশিবিরে আটক অনেকে।
ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই নিজ নিজ দেশের এ মানুষগুলোকে ফিরিয়ে নিতে রাজি নয়। তবে শিশু-কিশোরদের ফিরিয়ে নিতে চায় বেলজিয়াম।
তবে তিন মা ও সাত সন্তান বেলজিয়ামে ফেরার সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানা গেছে।
ফিরে যাওয়া মা ও তাদের সন্তানরা সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রোজ ক্যাম্পে ছিল। সেখান থেকে ব্রাসেলসে ফিরলে ওই নারীদের গ্রেপ্তার ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযোগ গঠন করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সন্তানদের নেয়া হবে শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে।
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সান্ডার ডে ক্রু গত মার্চে এক ঘোষণায় বলেন, সিরিয়ার বন্দিশিবিরে আটক ১২ বছরের কমবয়সীদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তার সরকার। তাদের কল্যাণ বিবেচনা গুরুত্বপূর্ণ বলেও সে সময় উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে দেশটির বেসরকারি সাহায্য সংস্থা চাইল্ড ফোকাস। সংস্থার প্রধান হেইদি দে প’ মনে করেন, যুদ্ধক্ষেত্রের বিপজ্জনক পরিবেশ থেকে শিশুদের বের হওয়ার সুযোগ দেয়া উচিত।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর আইএসে যোগ দিতে লুকিয়ে সেখানে যায় বেলজিয়ামের চার শতাধিক মানুষ। ইউরোপের অন্য কোনো দেশ থেকে এতো বেশি মানুষ আইএসে যোগ দেয়নি।
আইএসের সর্বোচ্চ আধিপত্যের সময়ে ইরাক ও সিরিয়ার ৮৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল আইএস। প্রতিষ্ঠা করেছিল স্বঘোষিত খেলাফত। ২০১৯ সালের মার্চে দখলকৃত শতভাগ এলাকা পুনরুদ্ধার ও আইএসকে আঞ্চলিকভাবে উৎখাতে বিজয় ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক জোট।
সে সময় দীর্ঘ সংঘাতে গৃহহীন লাখো মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে স্থানান্তর করা হয় বিদেশি মা ও শিশুদের।
দেশে ফিরলে নিরাপত্তায় ঝুঁকির কারণ হতে পারে তারা, এমন সন্দেহে নিজ নাগরিকদের ফেরাতে অনীহা জানিয়ে আসছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৫ সালে আইএসে যোগ দেয়া ব্রিটিশ স্কুলপড়ুয়া শামীমা বেগমের কথা। নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে পরবর্তীতে তার নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাজ্য।
তবে মানবিক কারণে নিজ নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।
বিশেষ করে বন্দিশিবিরে নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি নতুন করে তাদের উগ্রবাদে জড়ানোর ঝুঁকিও আছে বলে সতর্ক করেছে সংগঠনগুলো।