শারীরিক অসুস্থতার কারণে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সরে যাচ্ছেন। মন্ত্রীর পদ শুধু নয়, তিনি রাজনীতি থেকেও অবসরে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে মিলেছে এ খবর।
পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে সরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে। আর ২০১১ সালে অমিত মিত্র পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন বাম সরকারের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তকে সরিয়ে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমিত মিত্র তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করে, উত্তর চব্বিশপরগনার খড়দহ কেন্দ্র থেকে দুবার বিধায়ক নির্বাচিত হন। শারীরিক কারণে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করে মমতা ফের অমিত মিত্রকে অর্থমন্ত্রী পদে বসান। এবার তিনি ছয় মাসের বেশি দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নন।
ঋণে জর্জরিত রাজ্যকে দক্ষতার সঙ্গে উন্নয়নের সড়কে তোলার লড়াইয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন অমিত। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফসিসিআই) সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি অমিত মিত্র রাজ্যের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত দিয়েছেন বলে অভিমত অনেকের।
সম্প্রতি বিধানসভায় অমিত মিত্রের তৈরি করা বাজেট নিয়ে প্রশংসা এসেছে বিজেপির তরফ থেকেও। বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বাম জমানার অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের চেয়ে ভালো বাজেট।’
কিন্তু অসুস্থতার জন্য অর্থমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে অমিত মিত্রের জন্য। শারীরিক কারণে তিনি বিধানসভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। নিজে বাজেট পেশ করতে পারেননি। তার তৈরি বাজেট পেশ করেছেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
সংবিধান অনুযায়ী অমিত মিত্রকে পদে থাকতে হলে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। কিন্তু তিনি সে পথে যাচ্ছেন না বলে আগে থেকেই ইঙ্গিত মিলছে। দলকে নিজের ইচ্ছের কথা জানালে পুরোপুরি সম্মতি মেলেনি। তৃতীয় দফায় সরকারের দায়িত্ব নেয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জবাবে বলেছেন, ‘অন্তত ছয় মাস দায়িত্বে থাকুন, অমিতদা। তারপর দেখা যাবে।’
টানা ১০ বছর দক্ষতার সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর দপ্তর সামলানো অমিত মিত্রের বিকল্প খুঁজছে তৃণমূল। রাজ্যের পরবর্তী অর্থমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। তবে অমিতকে ছাড়তে রাজি নয় অধিকাংশ তৃণমূল কর্মী।
স্বাধীনতাসংগ্রামী হরিদাস মিত্র এবং রাজ্য বিধানসভার সাবেক ডেপুটি স্পিকার বেলা মিত্রের পুত্র অমিত মিত্রকে ভিন্ন পন্থায় সরকারে যুক্ত রাখার বিষয়েও আলোচনা চলছে। তাকে অর্থ মন্ত্রকের উপদেষ্টা পদে যুক্ত রাখা যায় কি না, সেটিও ভাবা হচ্ছে।
তৃণমূল সূত্রমতে, অমিতের সরে দাঁড়ানোর পর অর্থমন্ত্রীর দপ্তর আপাতত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই থাকতে পারে। তাকেও আবার নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। কেননা, তিনি নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের বিধানসভা ভোটে হেরে গিয়েও সংবিধানের নিয়ম মেনে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। আবার সংবিধানের নিয়ম মেনে তাকে জিতেও আসতে হবে।