বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাইতির প্রেসিডেন্ট হত্যা সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে

  •    
  • ১১ জুলাই, ২০২১ ০৯:৫০

ফার্স্টলেডি বলেন, ‘চোখের পলকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে ঢুকে আমার স্বামীকে ঝাঁজরা করে দেয় দুর্বৃত্তরা। এই বর্বরতা প্রকাশের কোনো ভাষা নেই। কারণ জোভেনেল মোউসের মতো একজন প্রেসিডেন্টকে এভাবে হত্যা করতে হলে, একটা শব্দ উচ্চারণ করারও সুযোগ না দিয়ে তাকে মেরে ফেলতে হলে আপনাকে সীমাহীন বর্বর হতে হবে।’

হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোউসেকে রাজনৈতিক কারণে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ফার্স্ট লেডি মার্টিন মোউসে।

তার দাবি, সংবিধান সংশোধনের জন্য গণভোটের উদ্যোগ নেয়ায় বিরোধীদের ক্ষোভের বলি হয়েছেন প্রেসিডেন্ট। কারণ এতে আরও বেশি ক্ষমতার অধিকারী হতেন তিনি।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বাসভবনে ঢুকে প্রেসিডেন্টকে হত্যার চারদিন পর প্রথম এ বিষয়ে কথা বলেছেন তার স্ত্রী। তিনি জানান, ‘চোখের পলকে’ তার স্বামীকে হত্যা করে বন্দুকধারীরা।

মার্টিন মোউসে বলেন, অজ্ঞাতনামা ওই দুর্বৃত্তরা ‘প্রেসিডেন্টের স্বপ্নকে হত্যা করতে চেয়েছিল’।

ফার্স্টলেডি আরও বলেন, ‘আমি কাঁদছি ঠিকই। কিন্তু এভাবে দেশকে হেরে যেতে দিতে পারি না আমরা।

‘প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোউসে, আমার স্বামী, আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান, যাকে আমরা এত ভালোবাসি এবং বিনিময়ে যিনি আমাদের এতটা ভালোবাসা দিয়েছেন, তার রক্ত বৃথা যেতে দিতে পারি না।’

গত ৭ জুলাই মধ্যরাতে খুন করা হয় হাইতির প্রেসিডেন্টকে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ২৮ বিদেশির একটি দল এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওই হামলায় গুরুতর আহত ফার্স্টলেডিকে সেদিনই চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে নিজের পেজে শনিবার একটি অডিওবার্তা দেন মায়ামিতে চিকিৎসাধীন মার্টিনা মোউসে।

তিনি জানান, কাজ বন্ধ করবেন না তিনি। রেকর্ডেড কণ্ঠটি প্রেসিডেন্টের স্ত্রীর বলে নিশ্চিত করেছেন অনেকে।

মার্টিনা জানান, গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিলেন তার স্বামী। এত দ্রুত এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে যে মৃত্যুর আগে ‘একটা শব্দও উচ্চারণ করতে পারেননি’ জোভেনেল।

ফার্স্টলেডি বলেন, ‘চোখের পলকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে ঢুকে আমার স্বামীকে ঝাঁজরা করে দেয় দুর্বৃত্তরা। এই বর্বরতা প্রকাশের কোনো ভাষা নেই।

‘কারণ জোভেনেল মোউসের মতো একজন প্রেসিডেন্টকে এভাবে হত্যা করতে হলে, একটা শব্দ উচ্চারণ করারও সুযোগ না দিয়ে তাকে মেরে ফেলতে হলে আপনাকে সীমাহীন বর্বর হতে হবে।’

ক্যারিবীয় অঞ্চলে অবস্থিত হাইতি উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দরিদ্রতম দেশ। ২০১৭ সাল থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ৫৩ বছর বয়সী মোউসে।

দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ আর রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে ব্যাপক গণআন্দোলনের কারণে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে খুব একটা মসৃণ পথ পার করছিলেন না তিনি।

২০১৯ সালের অক্টোবরে হাইতিতে সাধারণ নির্বাচনের কথা থাকলেও নানা বিতর্কে পিছিয়ে যায় সেটি। ডিক্রি জারি করে দেশের নেতৃত্বভার ধরে রেখেছিলেন মোউসে। সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবের ওপর আসছে সেপ্টেম্বরে গণভোট দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তার।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মোউসের পদত্যাগের দাবি জানান বিরোধীরা। সে সময় তাকে হত্যার ও সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার একটি ষড়যন্ত্র নস্যাতের কথা জানিয়েছিলেন মোউসে।

বুধবারের হামলার পেছনে কারা জড়িত এবং কী উদ্দেশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, তা এখনও অস্পষ্ট। প্রেসিডেন্টের বাসভবনে বিনা বাধায় কীভাবে হত্যাকারীরা প্রবেশ করল, সে প্রশ্নসহ অনেক কিছুরই জবাব মেলেনি। আগামী সপ্তাহে মোউসের দেহরক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

বিরোধী দলীয় নেতা ও হাইতির সাবেক সিনেটর স্টিভেন বেনোয়েট স্থানীয় গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজের সন্দেহের কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা এ হত্যাকাণ্ডের হোতা নয়।’ যদিও দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণও উপস্থাপন করেননি তিনি।

হাইতির পুলিশ জানিয়েছে, ঘাতক দলের বেশিরভাগই কলম্বিয়ার নাগরিক। দুইজন হাইতিয়ান আমেরিকান।

হত্যাকাণ্ডের পর সেনা অভিযানে রাজধানী থেকে ১৭ জনের একটি দলকে আটক করা হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে তিনজন। আটজনকে খুঁজছে পুলিশ।

তদন্তে হাইতিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে কলম্বিয়া সরকার। কলম্বিয়া পুলিশের পরিচালক জেনারেল জর্জ লুইস ভার্গাস জানান, এ হত্যাকাণ্ডে দেশটির ১৭ জন সাবেক সেনা জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের সম্পৃক্ততা বা আটকের খবর এখনও নিশ্চিত করেনি আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সংবাদমাধ্যমগুলোতে দ্বৈত নাগরিকত্বের এক ব্যক্তিকে আটকের খবর প্রকাশ হয়েছে। জেমস সোলাজেস নামের ৩৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বাড়ি ফ্লোরিডায়। তিনি হাইতিতে অবস্থিত কানাডার দূতাবাসে দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

অভিযুক্ত অপর হাইতিয়ান-আমেরিকান নাগরিক জোসেফ ভিনসেন্ট ঘাতক দলটিতে দোভাষী হিসেবে কাজ করত বলে জানিয়েছেন হাইতির বিচারক ক্লিমেন্ত নোয়েল।

তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার করা উদ্দেশ্য ছিল তাদের, হত্যা করা নয়।’

এদিকে হাইতিতে প্রেসিডেন্টকে হত্যার পর থেকে জারি জরুরি অবস্থার মধ্যে সরকারের নেতৃত্ব কে আছেন, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।

সংবিধান অনুসারে আরেকজন প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব দেয়ার কথা পার্লামেন্টের। কিন্তু ২০১৯ সালের অক্টোবরে নির্বাচন না হওয়া এবং গণআন্দোলনের মধ্যেও ডিক্রি জারির মাধ্যমে মোউসে শাসন জারি রাখায় পার্লামেন্টের এ কর্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

সংবিধান সংশোধনী অনুযায়ী পরবর্তী শাসনভার প্রধানমন্ত্রীর হলেও সে সংশোধনীও সর্বসম্মত নয়।

তার ওপর বর্তমানে হাইতির অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী আছেন ক্লড জোসেফ। আর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এরিয়েল হেনরির দায়িত্ব নেয়ার কথা থাকলেও এখনও শপথ নেননি তিনি। তারা দুজনেই ক্ষমতা দাবি করছেন।

এ অবস্থায় কয়েকটি রাজনৈতিক দল শুক্রবার জোসেফ ল্যাম্বার্টকে নতুন প্রেসিডেন্ট ও হেনরিকে তার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে একটি প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছে।

এ বিভাগের আরো খবর