সাউথ আফ্রিকা ভেবেছিল, করোনাভাইরাসের সবচেয়ে ভয়ানক চেহারা তাদের দেখা হয়ে গেছে। নতুন করে সব কিছু শুরু করা যেতে পারে।
কিন্তু দেশটির সেই আশা ভুল প্রমাণ করেছে ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনার ডেল্টা ধরন। এর প্রকোপে সাউথ আফ্রিকা এখন যা দেখছে, তা আগে কখনো দেখেনি।
সাউথ আফ্রিকার হাসপাতালগুলোর জরুরি ওয়ার্ড কানায় কানায় ভরে গেছে করোনায় আক্রান্ত রোগীতে। হাসপাতালের শয্যা, স্ট্রেচারে পড়ে রয়েছে অনেকে। কেউবা হুইলচেয়ারে বসে অপেক্ষার প্রহর গুণছে শয্যার আশায়।
শুক্রবার সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালে অনেকে অক্সিজেন নিচ্ছে। কেউ কেউ আবার শয্যার জন্য অপেক্ষা করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে।
সাউথ আফ্রিকার বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গের অবস্থা খুবই করুণ। করোনার তৃতীয় ধাক্কায় শহরটি কঠিন সময় পার করছে।
জোহানেসবার্গের এক হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় করোনা রোগী নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সেই তাদেরকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
শহরটির এক সরকারি হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বলেন, ‘হাসপাতালের অবস্থা বিধ্বস্ত, পরিস্থিতি হৃদয়বিদারক।
‘আমাদের মানুষের জীবন রক্ষার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু অবস্থা এমনই অসহায় যে, আমাদের যুদ্ধকালীন মানসিকতায় ফিরে যেতে হচ্ছে।
‘অসাড়-ভোঁতা অনুভূতির কাছে বার বার আত্মসমর্পণ করছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘গাড়িতে রোগীদের হাসপাতালে আনা হচ্ছে। এসব রোগীর হাসপাতালের সেবার খুবই দরকার। কিন্তু শয্যা খালি না থাকায় তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছি। চিকিৎসা করাতে পারছি না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চিকিৎসক বলেন, ‘করোনার তৃতীয় ধাক্কা আগের চেয়ে অনেক বিনাশী, অনেক বিধ্বংসী।’
এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার করোনায় মারা গেছেন জোহানেসবার্গ শহরের মেয়র জেফরি মাখুবো।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শুরুর দিকে জোহানেসবার্গের মানুষ উল্লসিত হয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছিল। করোনাকে পরাস্ত করতে সে সময় অনেকটাই সক্ষম হয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।
কিন্তু মাসকয়েক আগে ডেল্টা ধরনের আঘাতে থেমে গেছে উল্লাস।
পরিসংখ্যানবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, সাউথ আফ্রিকায় এখন পর্যন্ত ২১ লাখ ৩৫ হাজার ২৪৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৩ হাজার ৪৯৯ জনের।
বৃহস্পতিবার একদিনেই দেশটিতে মৃত্যু হয় ৪৬০ জনের। ওই দিন ২২ হাজার ৯১০ জনের দেহে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়।