৫৭ সদস্য নিয়ে ২০১৯ এর মে মাসে নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে ২৪ ক্যাবিনেট মন্ত্রী, ৯ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং ২৪ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
দু’বছর পর সেই মন্ত্রিসভায় ব্যাপক রদবদল আনলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার রাষ্ট্রপতি ভবনে সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হওয়া দেড়ঘণ্টার অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ৪৩ জন মন্ত্রীকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
শপথ নেওয়া মন্ত্রীদের মধ্যে ৩৬ জনই নতুন। বর্তমান মন্ত্রিসভার ৭ প্রতিমন্ত্রীকে এদিন পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। মন্ত্রীদের শপথের পর ভারতের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হলেন ৭৭ জন।
সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রী পরিষদের সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ৮১ হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নরেন্দ্র মোদি বুধবার যেভাবে মন্ত্রিসভার রদবদল ঘটিয়েছেন তাতে এটা খুবই স্পষ্ট ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে আর বিশেষ কোনও পরিবর্তন হবে না টিম মোদিতে।
মোদি মন্ত্রিসভার রদবদলে সবচেয়ে বড় চমক ৭ পূর্ণমন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়া। বুধবার সকালেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ১২ মন্ত্রীকে পদত্যাগ পত্র জমা দিতে বলা হয়। এই ১২ জনের মধ্যে ৭ জনই পূর্ণমন্ত্রী।
নতুনদের জায়গা দিতে পদত্যাগ করতে হয় কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ও কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর, শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন, শ্রম মন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার , সামাজিক ন্যায় মন্ত্রী থাবরচাঁদ গেহলট, রাসায়নিক ও সারবিষয়ক মন্ত্রী সদানন্দ গৌড়াকে।
দেশে করোনা পরিস্থিতিতে একাধিকবার বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। সেখান থেকে পরিকল্পিতভাবেই হর্ষ বর্ধনকে মোদি সরিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক অঙ্গনের একাংশ।
অন্যদিকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন সদ্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক। পদত্যাগকারীদের মধ্যে থারচাঁদ গেহলট ইতিমধ্যেই কর্নাটকের রাজ্যপাল হয়েছেন।
সম্প্রতি নয়া ডিজিটাল আইন বলবৎ করার ক্ষেত্রে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে রবিশঙ্কর প্রসাদের মন্ত্রণালয়। টুইটারের আইনি রক্ষাকবচ তুলে নেওয়া থেকে টুইটারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই, কেন্দ্রের হয়ে সবকিছু সামলেছেন তিনি। তারপরও কেন পদত্যাগ, তার কোনও উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। মোদির মন্ত্রিসভার অন্যতম বড় মুখ রবিশঙ্কর প্রসাদ ও প্রকাশ জাভড়েকর। বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের হয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন তারা। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন সাংগঠনিক কাজে ফিরতে পারেন এই দুই নেতা। সেই উদ্দেশেই তাদের পদত্যাগ করানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, অন্য যাদের মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, সঞ্জয় ধোত্রে, রতন লাল কাতারিয়া, প্রতাপ চন্দ্র সরঙ্গি, দানবে রাওসাহেব পাতিল ও দেবশ্রী চৌধুরী।
বুধবার যে ৪৩ জন শপথ নিলেন তার মধ্যে ১৫ পূর্ণমন্ত্রী , ৬ স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও ২২ জন প্রতিমন্ত্রী। সরকারে বিজেপির শরিক দল জনতা পার্টির (ইউনাইটেড) রামচন্দ্র প্রসাদ সিং , আপনা দলের অনুপ্রিয়া প্যাটেল , লোক জনশক্তি পার্টির পশুপতি কুমার পারসকে মন্ত্রীসভায় নেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের পুরানো দুজন প্রতিমন্ত্রীকে সরিয়ে এবার নতুন ৪ জনকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। এই রাজ্য থেকে মন্ত্রী হলেন নিশীথ প্রামাণিক, শান্তনু ঠাকুর, সুভাষ সরকার ও জন বার্লা।
বুধবারের মন্ত্রিসভা রদবদলের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মন্ত্রীদের বয়স বিশ্লেষণ করলে এই মন্ত্রিসভা ভারতের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম মন্ত্রিসভা।
পাশাপাশি, মন্ত্রিপরিষদে নারীদের উপস্থিতিও উল্লেখ করার মতো। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এখন নারী সদস্যের সংখ্যা মোট ১১। এদিনই শপথ নিয়েছেন ৭ নারী মন্ত্রী। মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে চমক দিয়েছেন মোদি ও অমিত শাহ।
গেরুয়া দল সূত্রে খবর, আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন হবে। মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে এই বিষয়টির উপর বিশেষ জোর দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। এছাড়াও ভারসাম্য রক্ষায় বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেওয়া হয়েছে কয়েকজনকে।