আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে সোমবার প্রতিবেশী তাজিকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে আরও এক হাজারের বেশি সেনা।
এ নিয়ে শনিবার থেকে সোমবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে প্রায় এক হাজার ৬০০ সেনা সদস্য।
তালেবানের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সেনারা দেশ ছাড়া শুরু করে।
তাজিকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে আফগান সেনারা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ নিয়ে তালেবানের আক্রমণের মুখে তিন দিনে তৃতীয়বার এবং ১৫ দিনে পঞ্চমবার পিছু হটেছে সেনারা।
সবশেষ রোববার রাতভর তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে সহিংসতার পর সোমবার ভোর থেকে তাজিকিস্তানে ঢুকতে শুরু করে আফগান সেনারা।
আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী বাদাখশান ও তাখার প্রদেশে খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে তালেবান।
সব সড়ক বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে কেবল সীমান্ত অতিক্রমের পথ তারা খোলা রেখেছে বলে জানিয়েছেন আফগান সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জাবিউল্লাহ আতিক।
বাদাখশানের এই আইনপ্রণেতা জানান, বেশ কয়েকটি পথে সেনারা পালিয়েছে। তাজিক সীমান্তরক্ষীরা তাদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থাও করছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি।
গত কয়েক সপ্তাহে আফগানিস্তানজুড়ে বেড়েছে সহিংসতা। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান।
প্রায় ২০ বছর পর দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের সেনারা বিদায় নিতে শুরু করার পরই নিরাপত্তা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়।
সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়ার কথা থাকলেও তিন মাস বাকি থাকতেই দেশে ফিরেছে বেশিরভাগ বিদেশি সেনা।
যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের অনুপস্থিতিতে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে শুরু করেছে আফগান সেনাবাহিনী। কিন্তু এর মধ্যেই দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি তলানিতে; দেখা দিয়েছে গৃহযুদ্ধের শঙ্কা।
৪১৯টি জেলার মধ্যে শতাধিক দখল করে নিয়েছে তালেবান। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো দখলের মাধ্যমে এগোচ্ছে রাজধানী কাবুলের দিকে।
শান্তি চুক্তি অনুযায়ী, তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে কোনো উগ্রবাদী কার্যক্রম হতে না দেয়ার শর্তে আফগানিস্তান ছাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্ররা।
কিন্তু আফগান বাহিনীর সঙ্গে সহিংসতা বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই তালেবানের; বরং একের পর এক আগ্রাসী অভিযানের মাধ্যমে দেশের এক-তৃতীয়াংশের দখল নিয়ে ফেলেছে গোষ্ঠীটি।
আফগান সেনাদের দেশের নিরাপত্তা রক্ষার পূর্ণ সক্ষমতা আছে বলে দাবি প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির। কিন্তু সেনাদের পালিয়ে পাকিস্তান ও উজবেকিস্তানে আশ্রয় নেয়ার ঘটনা বাড়ছে বলে খবর আসছে।
এ অবস্থায় সহিংসতা আরও বাড়ার আশঙ্কায় সম্ভাব্য শরণার্থীর ঢল সামলাতে প্রস্তুত হচ্ছে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো।
তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিনের দাবি, সম্প্রতি সহিংসতা বাড়ার ঘটনায় গোষ্ঠীটির কোনো দায় নেই।
আফগান সেনারা লড়তে রাজি না হওয়ার পর মধ্যস্থতার মাধ্যমে তালেবান জেলাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।