জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের রায়নাওয়ারীর ৪৪ বছর বয়সী বশির আহমদ বাবা ১১ বছর পর নিজ বাড়িতে ফিরেছেন।
এই ১১ বছর তিনি ছিলেন গুজরাটের জেলে। গুজরাট পুলিশ তাকে সন্ত্রাসের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল। তার বিরুদ্ধে ভারতের বহু বিতর্কিত এবং কড়া আইন হিসাবে পরিচিত বেআইনী কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনে (ইউএপিএ) মামলা করা হয়।
১১ বছর পর প্রমাণিত হয়েছে তিনি নির্দোষ। গত ১৯ জুন উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ না থাকায় তাঁকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করে আনন্দ জেলা আদালত।
কাশ্মীরের বাসিন্দা বশির রায়নাওয়ারীতে একটি কম্পিউটার ইনস্টিটিউট চালাতেন। একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও কাজ করতেন তিনি। যে সংস্থাটি ফাটা ঠোঁটযুক্ত শিশুদের জন্য চিকিৎসা শিবির পরিচালনা করত।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি কর্কট রোগে আক্রান্ত বাবার সেবা-শুশ্রষা শিখতে একটি কর্মশালায় যোগ দিতে গুজরাটে গিয়েছিলেন। তবে ২০১০ সালের ১৩ মার্চ বাড়ি ফেরার ঠিক একদিন আগে গুজরাট পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড বশিরকে ‘সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণের জন্য’ তরুণদের একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে রাজ্য সফর করার অভিযোগ এনে আনন্দ জেলা থেকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিজবুল মুজাহিদিনের সহযোগী হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
বশিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়। অভিযোগ ওঠে, ২০০২ সালে গুজরাটে যে দাঙ্গা হয়েছিল, সেই সময় ফোনে পাকিস্তানের হিজবুল মুজাহিদ্দিনের কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বসির আহমেদ বাবা। মুসলিমদের নিয়ে একটি জঙ্গি মডিউল গঠন করার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।
মাঝে দীর্ঘ ১১টি বছর কেটে গেলেও বসিরের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে না পারায় গত মাসেই আনন্দ জেলা আদালতের অতিরিক্ত বিচারপতি তাকে নির্দোষ বলে ঘোষণা করেন।
জেল থেকে মুক্তি পেয়েই বসির জানান, ‘কম্পিউটারের খুঁটিনাটিই তার পেশা ছিল। আচমকাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারপ্রক্রিয়া এতটাই ধীরগতির যে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ১১ বছর লেগে গেল।’
বসির জানান, জীবনের সব চেয়ে বড় দুঃখ হলো বাবার সঙ্গে শেষ দেখা করতে পারেননি তিনি। ২০১০ সালে তাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় সেই সময়ই ক্যান্সারে ভুগছিলেন তার বাবা। মৃত্যুর পর বড় ছেলে হিসাবে শেষকৃত্যের দায়িত্ব পালন তো দূরের কথা, সেই অনুষ্ঠানে যোগও দিতে পারেননি।
বসিরের মা মোখতা বেগম বলেন, ‘জেলবন্দি থাকাকালীনই ওর বাবা ও কাকার মৃত্যু হয়। আমরাও এই ১১ বছরে কেবল একবারই ওকে দেখতে গিয়েছি। কারণ গুজরাটে দ্বিতীয়বার যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমাদের নেই।’
বসির কারাগারে থাকাকালীন রাষ্ট্রবিজ্ঞান, জনপ্রশাসন ও বৌদ্ধিক সম্পত্তি আইন— তিনটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কারাগারে আমার বেশিরভাগ সময় পড়াশোনায় কাটিয়েছি এবং আমি নিশ্চিত ছিলাম যে একদিন আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পাব।’