কসবার জাল টিকা কাণ্ডের দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে কি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের যোগ ছিল ? জৈন হাওলা মামলার চার্জশিটে নাম থাকা ধনকড় কি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ? একের পর এক ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় একাধিক ছবি সামনে আনলে, সেখানে দেখা যায়, টিকা কাণ্ডের পান্ডা দেবাঞ্জনের দেহরক্ষীর রাজ্যপালের পরিবারের সঙ্গে ছবি রয়েছে। এই দেহরক্ষীর মাধ্যমে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের কাছে খাম যেত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তৃণমূল সাংসদ।
অরবিন্দ বৈদ্য সাবেক বিএসএফ জওয়ান বর্তমানে ভুয়া আইএএস দেবাঞ্জনের দেহরক্ষী ছিলেন। তার সঙ্গে দেবাঞ্জনের একাধিক ছবি রয়েছে । আবার দেবাঞ্জনের দেহরক্ষী অরবিন্দের সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের ছবি রয়েছে। তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের প্রশ্ন, ‘একজন প্রতারক কিভাবে রাজভবনে ঢুকলেন।’
তৃণমূলের দাবি, এর মাধ্যমে বিশেষ খাম যেত রাজভবনে।
সাংসদের দাবি, ‘যদি প্রমাণ হয়, ওই সিকিউরিটির সঙ্গে রাজ্যপালের সম্পর্ক রয়েছে, তাহলে তা দেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর।’
এতদিন ভুয়া দেবাঞ্জনের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের ছবি দেখিয়ে, বিজেপি চাপ সৃষ্টি করেছিল । এবার দেবাঞ্জনের সঙ্গে রাজ্যপালের ছবি দেখিয়ে পাল্টা চাপ সৃষ্টি করল তৃণমূল।
ভুয়া টিকা কান্ডে, বিজেপির হাত থাকতে পারে বলে, বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলনে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
এবার রাজ্যপালের সঙ্গে প্রতারক দেবাঞ্জনের ছবি প্রকাশ করে, বিজেপিকে পাল্টা দিল তৃণমূল।
শুধু তাই নয় এদিন জৈন হাওলা কান্ডের প্রসঙ্গ টেনে, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে আক্রমণ করে, শুখেন্দু শেখর রায় বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জৈন হাওলা মামলায় রাজ্যপালের নাম নেয়ার পরই, ওই মামলার মূল অভিযুক্তর মৃত্যু হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই মৃত্যু স্বাভাবিক, না অন্য কিছু রয়েছে এর নেপথ্যে, খতিয়ে দেখা উচিত।’
সুখেন্দু বলেন, ‘দেশের সুরক্ষা, মানুষের সুরক্ষা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছিল, তার সঙ্গে নাম রয়েছে ধনকড়ের। এই ধনকড় কি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ধনকড় ? এখনো আমাদের রাজ্যপাল তার উত্তর দিচ্ছেন না? জৈনদের হিসেব অনুযায়ী তিন চার কিস্তিতে টাকা নিয়েছিলেন ধনকড়। কে এই ধনকড় ? তিনি কি আমাদের রাজ্যপাল ? উত্তর দিচ্ছেন না কেন?'
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল, রাজ্য সরকার সংঘাত জারি আছে বহুদিন। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার প্রশ্নে বারবার সরব হন রাজ্যপাল। দিল্লি গিয়ে নালিশও করেন। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ ঘুরে আসেন তিনি। যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘উনি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উস্কানি দিতে গেছেন।’
এরপর মুখ্যমন্ত্রী, জৈন হাওলা মামলার চার্জশিটে ধনকড়ের নাম ছিল বলে অভিযোগ করেন।
১৯৯১ সালে কাশ্মীর থেকে হিজবুল মুজাহিদীন জঙ্গী আশফাক হুসেনকে গ্রেপ্তার করার পরে জানা যায়, হাওলার মাধ্যমে টাকা যেত জঙ্গিদের হাতে। আশফাক জানায়, সুরেন্দ্র জৈন নামে এক শিল্পপতির কাছ থেকে টাকা যেত। ওই হাওলায় জৈনদের আত্মীয়রাও জড়িত ছিল বলে তদন্তে প্রকাশ পায়।
আশফাকের এই বয়ানের ভিত্তিতে গোয়েন্দারা তল্লাশি চালালে খোঁজ মেলে দুটি ডায়রি ও দুটি নোটবুকের। কাকে কত টাকা দিয়েছেন সেখানে লিখে রেখেছিলেন জৈন। আর সেই তালিকায় নাম ছিল ধনকড়ের। তিনচার কিস্তিতে টাকা নিয়েছেন ধনকড়। কে এই ধনকড় ? তিনি কি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল, প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল।