দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় করোনাভাইরাসে মারা গেছেন কমপক্ষে ৪০১ জন চিকিৎসক। উদ্বেগের বিষয় হলো, তাদের মধ্যে টিকার দুই ডোজই নিয়েছিলেন অন্তত ১৪ জন।
ইন্দোনেশিয়ার মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন শুক্রবার নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। জানিয়েছে, টিকাগ্রহণ সম্পন্ন করার পরেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দেশটির আরও অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশটিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে প্রায় এক হাজার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর। শুধু চিকিৎসকের সংখ্যাই চার শতাধিক।
এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ইন্দোনেশীয় মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের করোনাভাইরাস প্রশমনবিষয়ক প্রধান মোহাম্মদ আদিব খুমাইদি।
তিনি বলেন, ‘তালিকার হালনাগাদ চলছে। মৃত্যুবরণ করা অন্যান্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে টিকা নিয়েও কারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে তথ্য সংগ্রহ করছি আমরা।’
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় বেড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এর মধ্যে নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে টিকার নেয়ার পরেও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে রূপ পরিবর্তিত ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকা।
দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় পৌনে ২১ লাখ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৫৬ হাজারের বেশি।
রাজধানী জাকার্তাসহ করোনার সংক্রমণে বিপর্যস্ত বিভিন্ন অঞ্চলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার ৭৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
এর মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের গবেষণালব্ধ টিকা করোনাভ্যাক নেয়া সত্ত্বেও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনায় মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থতায় বাড়ছে আতঙ্ক।
চলতি বছরের মধ্যে ১৮ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার, তার প্রায় পুরোটাই চীননির্ভর।
চলতি মাসে শুধু মধ্য জাভাতেই টিকা নেয়া ৩০০ জনের বেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত ও গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
ভারতে প্রথম শনাক্ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ রূপ পরিবর্তিত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনার সংক্রমণও এখন ঊর্ধ্বমুখী দেশটিতে।
উত্তর সুমাত্রার প্রাদেশিক রাজধানী মেদানের সরকারি কোভিড টাস্ক ফোর্স জানিয়েছে, সেখানে গত ছয় মাসে এক হাজার ৮০০’র বেশি শিশু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।
নতুন সংক্রমণের এক-তৃতীয়াংশই ছোট ছোট স্কুলপড়ুয়া শিশু।
এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো শুক্রবার বলেন, ‘নজিরবিহীন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। দ্রুততম সময়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ সফল করতে জনগণের সহযোগিতা চায় সরকার।’
বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশটিতে পবিত্র রমজান মাস ও ঈদুঐ ফিতরের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক মানুষ এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ভ্রমণ করেছেন।
এ কারণেই এখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছোঁয়াচে রোগটির বিস্তার বাড়ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যবিদরা।