ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সরকার গঠনের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করেছে। আর ভোটে হেরে গিয়ে বিজেপি এখন বাংলাকে টুকরো করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের।
মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করে তৃণমূল লোকসভার সদস্য সৌগত রায় বলেন, ‘ভোটে হেরে গিয়ে নানাভাবে রাজ্যকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে বিজেপি।’
বিজেপির লোকসভার দুই সদস্য জন বার্লা ও সৌমিত্র খাঁ বাংলা ভাগের দাবি তোলায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
আগেই বিজেপির জন বার্লা উত্তরবঙ্গের ৭ জেলা নিয়ে পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবি তোলেন। সোমবার বিষ্ণুপুরের বিজেপি লোকসভা সদস্য সৌমিত্র খাঁ ‘জঙ্গলমহল একই দাবি করতে পারে, কেননা রাঢ়বঙ্গও উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত’, মন্তব্য করে বিতর্ক উস্কে দেন।
আর এই উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলে অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারের জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি বাবুল কর থানায় এফআইআর করেন।
তৃণমূলের যুব সভাপতি বাবুল কর বলেন, ‘আলিপুরদুয়ারের সংসদ সদস্য জন বার্লা এবং বিষ্ণুপুরের সৌমিত্র খাঁ নিজেরাই ক্রিমিনাল। এদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক।’
আলিপুরদুয়ার থানার আইসি এস প্রধান জানান, ‘অভিযোগ গৃহীত হয়েছে। তদন্ত শুরু হবে। সেই মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ দিন থানার বাইরে তৃণমূল কর্মীরা উত্তরবঙ্গ ভাগের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেন। অন্যদিকে জন বার্লার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সাতটি অভিযোগ হয়েছে।
বিজেপি নেতাদের বাংলা ভাগের দাবিকে ঘিরে যখন রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তখন জন বার্লার দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন বিজেপির উত্তরের দুই বিধায়ক আনন্দময় বর্মন ও নীরজ জিম্বা। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সাফাই, ‘বঞ্চনা হয়েছে। তাই তার কথা বলছেন সকলে। একে বঙ্গভঙ্গের দাবি হিসেবে দেখা অনুচিত।’
শুধু তৃণমূল নয়। সিপিএম, কংগ্রেসও বিজেপির বাংলা ভাগের দাবিকে চক্রান্ত বলে মনে করে। তারা বাংলার মানুষকে সজাগ থাকতে বলেছেন।
বিজেপি নেতাদের বাংলা ভাগ করার দাবি আসলে আরএসএসের পরিকল্পনার অংশ বলে মনে করেন বহরমপুর লোকসভা সদস্য অধীর চৌধুরী।
মঙ্গলবার তিনি বহরমপুরে বলেন, ‘আরএসএসের নীতি মেনে পরিকল্পিতভাবে বাংলা ভাগের দাবি তুলছে বিজেপি। কারণ তারা বুঝে গেছে ২০২৪ সালে মোদি চমক আর কাজ করবে না। তাই ছলেবলে নির্বাচনে জেতার পরিকল্পনা করছে।’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘বিজেপির বাংলা ভাগের চক্রান্তে মানুষকে সজাগ থাকতে হবে।’
বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে নতুন করে বঙ্গভঙ্গ রোধ করতে হবে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সাফকথা, ‘প্রাণ থাকতে বাংলাকে ভাগ হতে দেব না।’
বাংলা ভাগের দাবি তুলে রাজ্য জুড়ে বিতর্কের মুখে পড়ে বিজেপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিজেপি বাংলা ভাগ চায় না। কেউ যদি বলে থাকে তা তাদের ব্যক্তিগত মত।