ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করায় এক বছরেরও বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিন শিক্ষার্থী। অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির তিহার জেল থেকে জামিনে মুক্তি পান নাতাশা নরওয়াল, দেবাঙ্গনা কলিতা ও আসিফ ইকবাল তানহা।
তবে জামিনে মুক্তি দিতে নারাজ দিল্লি পুলিশ এদিন সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হলেও মিলল না সুফল। ওই তিন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর জামিনের সিদ্ধান্তই বহাল রাখলো সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত এবং বিচারপতি ভি রামসুব্রামনিয়ানের বেঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্ট বলছে, ইউএপিএর মতো সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কঠোর আইনে অভিযুক্তদের জামিন দেয়ার এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে কোনো মামলার ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যাবে না।
এমনকি আগামী মাসে শীর্ষ আদালত দিল্লি হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের সমস্ত আইনি দিক বিচার করে দেখবে। আদালতের কথায়, ‘যেহেতু এই ঘটনার সারাদেশে প্রভাব পড়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তাই আদালত পুরো বিষয়টি শুনবে এবং দেশের সাধারণ মানুষের কাছে আইনের বিভিন্ন দিক স্পষ্ট করে দিতে চাইবে।’
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে নাগরিকত্ব আইন ঘিরে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি ছড়িয়েছিল, এর পরিপ্রেক্ষিতেই মে মাসে তিন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক বছরেরও বেশি সময় জেলবন্দি থাকার পর মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সিদ্ধার্থ মৃদুল এবং বিচারপতি অনুপ জয়রাম ভম্বানির বেঞ্চ ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ড ও পাসপোর্ট জমা নিয়ে জামিনের নির্দেশ দিয়েছিল ওই তিন অভিযুক্তকে।
কিন্তু নানা অজুহাতে জামিন দিতে দেরি করছিল দিল্লি পুলিশ, এমনটাই অভিযোগ। অবশেষে গতকাল রাতে জেল থেকে মুক্তি পান ওই তিন শিক্ষার্থী।
এদিকে দিল্লি হাইকোর্টের জামিনের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ট্রায়াল কোর্টও দিল্লি পুলিশের জামিন বাতিলের আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপরই সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হয় পুলিশ। তবে এদিন সুপ্রিম কোর্টও ওই সিদ্ধান্তই বহাল রাখে।
আদালতে দিল্লি পুলিশের হয়ে শুনানি করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ও অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আমন লেখি। শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইউএপিএর ধারায় এই তিন শিক্ষার্থীর গ্রেপ্তার সম্পর্কিত যে কোনো সিদ্ধান্তের প্রভাব পুরো ভারত জুড়ে পড়তে পারে। ওই তিন শিক্ষার্থীর জামিনে মুক্তির সিদ্ধান্তকে বহাল রাখা হলেও দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিভিন্ন আইনি দিকগুলিও খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট।
জুলাইয়ে এই মামলার আবার শুনানি হবে। তিন শিক্ষার্থীর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন বিশিষ্ট আইনজীবী কপিল সিবাল।