ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের কাছ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে নেয়া ঋণ এখন গলার কাঁটা হচ্ছে পাকিস্তানের। সময়মতো পরিশোধ করতে না পেরে এখন এক বছরের সময় চেয়ে আবেদন করেছে ইসলামাবাদ। তবে বেইজিং কোনো সাড়া দিচ্ছে না।
পাকিস্তানের দৈনিক দ্য ফ্রন্টিয়ার পোস্টের প্রতিবেদন উল্লেখ করে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ না করে এক বছর সময় চেয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
আগামী ২৩ জুলাই পাকিস্তানের ওই ঋণ পরিশোধের কথা আছে। তবে গত ৮ জুলাই তিনি চীনের স্টেট কাউন্সিলের প্রধান লি কেকিয়াংকে চিঠি লিখে আরও এক মাস সময় দেয়ার প্রস্তাব রাখেন।
এই বাড়তি সময়ের জন্য ইমরান ১ শতাংশ করে সুদ পরিশোধের প্রস্তাব রাখেন।
ষাটের দশক থেকেই চীন ও পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছরে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (সিপিইসি) পরিকল্পনার আওতায় বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে পাকিস্তান। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ঋণ এখন পাকিস্তানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
পাকিস্তানে চীনের অর্থায়নে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হয়।
আগেও চীনের কাছ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে বিপাকে পড়েছে পাকিস্তান। চলতি বছরেই ৩০০ কোটি ডলারের একটি ঋণ পুনর্গঠনের জন্য বেইজিংয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছিল ইসলামাবাদ। সেই ঋণও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্যই নেয়া হয়। কিন্তু চীন এই আবেদন রাখেনি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়ে ইসলামাবাদের ফের আলোচনার অনুরোধে প্রত্যাখ্যান করে চীন। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ঋণ মওকুফ করতে হলে সে ক্ষেত্রে চীনের ব্যাংকের শর্ত সংশোধন করা লাগবে।
পাকিস্তানের অনুরোধের জবাবে চীন আরও জানায়, সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির ধারা আবার পুনর্বিবেচনায় রাজি নয় চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অফ চায়নাসহ অন্যান্য ব্যাংক।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চের শেষের দিকে পাকিস্তানের ঋণ ও দেনা ৪৫ দশমিক ৪৭০ ট্রিলিয়ন রুপিতে উন্নীত হয়, যা আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৬৬৬ ট্রিলিয়ন রুপি বা ৬ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি। এই অঙ্ক পাকিস্তানের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১০৯ শতাংশ।
এই ঋণের একটি বড় অংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নেয় পাকিস্তান।
২০১৮ সালেও পাকিস্তানের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২০ কোটি ডলার। চলতি বছরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৮০ কোটি ডলারে। চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চার বছরের মধ্যে তা গিয়ে ঠেকবে ২ হাজার ৬৩০ কোটি ডলারে।
চীনের স্টেট কাউন্সিলের প্রধান লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
এসব কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবেই পরিশোধ করতে হচ্ছে ৫৯০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। কয়েক বছরের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৯৮০ কোটি ডলারে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে পাকিস্তানের মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেশটির জিডিপির ১১ শতাংশে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হলেও সেগুলোর সঞ্চালনব্যবস্থা ভালো নয়। ফলে গ্রাহকরা এর সুবিধা পাচ্ছেন না। এ কারণে দেশটিতে ব্যাপক বিদ্যুৎ-সংকট রয়েই গেছে।