দরিদ্র দেশগুলোর জন্য করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিশ্চিতে আরও ২৪০ কোটি ডলারের অনুদান দেবে বিভিন্ন দেশ ও বেসরকারি দাতা সংস্থা।
ভিডিও কনফারেন্সে জাপান ও টিকাবিষয়ক বৈশ্বিক জোট গ্যাভি আয়োজিত এক শীর্ষ সম্মেলনে বুধবার আসে এ ঘোষণা।
দরিদ্র দেশগুলোতে করোনা প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রমের পরিসর বাড়াতে তহবিল সংগ্রহে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মহামারি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দ্বীপদেশ মৌরিতানিয়া দিচ্ছে আড়াই হাজার ডলার অর্থ সহায়তা।
ছোঁয়াচে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধের লক্ষ্যে ধনী রাষ্ট্রগুলো দেবে কয়েক কোটি ডলারের অর্থ সাহায্য ও কয়েক লাখ ডোজ টিকা।
টিকার সুষম বণ্টন নিশ্চিতে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় খরচ হবে এই অর্থ। টিকা পাঠানো হবে দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোতে।
কোভ্যাক্স কর্মসূচিতে ডব্লিউএইচওর সঙ্গে যৌথভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে গ্যাভি।
এক বিবৃতিতে গ্যাভি জানিয়েছে, এই তহবিলের মাধ্যমে কোভ্যাক্সের আওতায় ১৮০ কোটি ডোজ টিকা একদম বিনা মূল্যে পাবে স্বল্প আয়ের বিভিন্ন দেশ। ২০২১ ও ২০২২ সালের শুরুতে সরবরাহ করা হবে এসব টিকা।
এর মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোতে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৩০ শতাংশ মানুষকে টিকাদানের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলেও জানিয়েছে গ্যাভি।
গ্যাভির চেয়ারম্যান হোসে ম্যানুয়েল বারোসো বলেন, ‘বৈশ্বিক সুরক্ষা নিশ্চিতের পথে এই অনুদান নিশ্চিত করা অনেক বড় সাফল্য।’
৮০ কোটি ডলার দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে সম্মেলনের অন্যতম আয়োজক জাপান সরকার। একই সঙ্গে কোভ্যাক্সের আওতায় জাপানে উৎপাদিত তিন কোটি ডোজ টিকাও দান করবে দেশটি।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা বলেন, শ্রেণিবৈষম্যহীন টিকা বণ্টনে উল্লেখযোগ্য ও অর্থপূর্ণ একটি পদক্ষেপ ছিল এ সম্মেলন।
নতুন করে ২৪০ কোটি ডলার অনুদান পেলে কোভ্যাক্স কর্মসূচির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সংগৃহীত মোট তহবিল বেড়ে দাঁড়াবে ৯৬০ কোটি ডলারে।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে কোভ্যাক্সের আওতায় ১২৭টি দেশে এ পর্যন্ত ৭ কোটি ৭০ লাখ ডোজ টিকা পৌঁছেছে।
তবে মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় বিপর্যস্ত ভারতে টিকার বড় অংশের উৎপাদন থমকে যাওয়ায় এখন খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে কোভ্যাক্স কর্মসূচি।
নতুন সহায়তার মধ্যে ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার ও দেড় কোটি ডোজ টিকা দেবে স্পেন। অস্ট্রেলিয়া দেবে ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অনুদান দেবে কানাডা, সুইডেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ডসহ আরও অনেক দেশ।
অলাভজনক জোট গ্যাভির অন্যতম অংশীদার বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। কোভ্যাক্সে ৫ কোটি ডলার অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জনহিতৈষী প্রতিষ্ঠানটি।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বিল গেটস বলেন, ‘উচ্চ আয়ের দেশগুলো প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশি টিকা মজুত করেছে। তাই অভ্যন্তরীণ চাহিদার সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়াই সেসব দেশ বিশ্বজুড়ে ঐক্যবদ্ধ টিকা কর্মসূচি জোরদারে সাহায্য করতে পারে।’
কোভ্যাক্সের আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ১০০ কোটির বেশি ডোজ করোনা প্রতিরোধী টিকা বণ্টনের লক্ষ্যে দেশগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানান গেটস।
সম্মেলনে অংশ নিলেও নতুন করে কোনো অনুদানের ঘোষণা দেয়নি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
তবে করোনাবিরোধী বৈশ্বিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে চলতি ও আগামী বছরের জন্য ৪০০ কোটি ডলার অর্থবরাদ্দের কথা জানান দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেডরোস আধানম গেব্রিয়েসুস জানান, ধনী দেশগুলোর মোট জনসংখ্যার বড় অংশ টিকা সুরক্ষার আওতায় এসে গেছেন। বিপরীতে আফ্রিকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যই টিকা নিশ্চিত করতে না পারা উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, ‘মহামারি কিংবা অর্থনীতি, যেদিক থেকেই দেখুন, নীতিগতভাবে বিষয়টি ভীষণ অগ্রহণযোগ্য।’
সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধী টিকার এক বা দুই ডোজ নিয়েছেন ১৮০ কোটি মানুষ।
এর মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ স্বল্প আয়ের দেশের নাগরিক।