করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কা অব্যাহত থাকার মধ্যে ভারতে প্রাণঘাতী মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে (কালো ছত্রাক) আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৭১৭ জন।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা সবশেষ তথ্যের ভিত্তিতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।
রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাটে দুই হাজার ৮৫৯ জনের দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়েছে। মহারাষ্ট্রে এ সংখ্যা দুই হাজার ৭৭০।
এ ছাড়া অন্ধ্র প্রদেশে ৭৬৮ জনের দেহে ছত্রাকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী দিল্লিতে এখন পর্যন্ত ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগী মাত্র ১২০ জন বলা হলেও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ সংখ্যা ৬২০।
রোগীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলায় গত সপ্তাহে ভারতের সবগুলো রাজ্যকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মহামারি পরিস্থিতি ঘোষণার অনুরোধ করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গুজরাটসহ চারটি রাজ্য মহামারি ঘোষণা করে।
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলার মধ্যে প্রাণঘাতী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রকোপ বৃদ্ধি ভারতকে নতুন সংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে বলে শুক্রবার বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
রোগের চিকিৎসায় একমাত্র ওষুধ অ্যাম্ফোটারিসিন-বি ইনজেকশনের ২৯ হাজার ২৫০টি ভায়াল বিভিন্ন রাজ্যে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রোগে আক্রান্ত ১১ হাজার ৭১৭ জনের জন্য হিসাব করে পাঠানো হয়েছে ভায়ালগুলো।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এর বিরুদ্ধে কার্যকর একমাত্র ওষুধ শিরায় প্রদেয় অ্যাম্ফোটারিসিন-বি ইনজেকশনের একেকটি ডোজের দাম প্রায় ৪৮ ডলার। রোগীকে টানা আট সপ্তাহ প্রতিদিন নিতে হয় এ ইনজেকশন।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়েছেন, এমন ব্যক্তিরা মিউকরমাইকোসিস নামের ছত্রাক সংক্রমণে ভুগছেন।
চোখ লাল হয়ে ফুলে ওঠা, ব্যথা, নাক ও এর চারপাশ লাল বা কালো হয়ে যাওয়া, জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি, শ্বাসকষ্ট, রক্তবমি, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, মানসিক অবসাদসহ অনেক উপসর্গই দেখা যায় বিরল এ রোগে।
ভারতে করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর ও ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হলে তাদের মধ্যে সাইনোসাইটিস, মুখের এক পাশে ব্যথা বা অনুভূতি হারানো বা ফোলা, নাক ও নাকের আশপাশের ত্বক কালচে হয়ে যাওয়া, দাঁতব্যথা, দাঁত পড়ে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসা, বুকে ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে মিউকরমাইকোসিসে মৃত্যু অবধারিত বলে জানিয়েছে আইসিএমআর।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তথা করোনাভাইরাস মহামারির আগে বিশ্বে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ দশমিক ৭। এ রোগে মৃত্যুহার ৫৪ শতাংশ।
যারা প্রাণে বেঁচে যান, তাদেরও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক বা দুই চোখ, এমনকি চোয়ালও ফেলে দিয়ে বাঁচতে হয় বাকি জীবন।
রোগটি এড়াতে ডায়াবেটিস রোগীদের সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকা ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া রোগীদের ওপর স্টেরয়েড প্রয়োগে চিকিৎসকদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রকোপ বাড়তে থাকার মধ্যেই হোয়াইট ও ইয়েলো ফাঙ্গাসের সংক্রমণের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ভারতে।
সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা রোগীদের মধ্যে নানা ধরনের ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। একই ছত্রাকের রং নিয়ে আলাদা করে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। শরীরের কোন অংশ থেকে ছত্রাকটির ছড়ানো শুরু হচ্ছে। মূলত তার ওপর নির্ভর করে এর রং।