ভারতে করোনাভাইরাস শনাক্তে এক দিনে রেকর্ড ২২ লাখ ১৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মঙ্গলবার। এর মধ্যে ২ লাখ ৮ হাজার মানুষের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে।
দেশটিতে সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও, কমছে না মৃত্যু। শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় মৃত্যু হয় ৪ হাজার ১৫৭ জনের।
এ নিয়ে মহামারি শুরুর পর থেকে ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় পৌনে তিন কোটি মানুষ। মৃতের সংখ্যা ৩ লাখ ১১ হাজারের বেশি।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বুধবার প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, আগের দিন নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের দৈনিক সংক্রমণ হার নেমে এসেছে শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশে। শনাক্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু ও উত্তর প্রদেশে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত এক সপ্তাহে ভারতে ১৯ লাখের বেশি মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। একই সময়ে ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজারের বেশি মানুষের। ১৪ এপ্রিলের পর প্রথম দৈনিক শনাক্ত দুই লাখের কম ছিল সোমবার।
শনাক্তের সংখ্যা মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি ছিল মহারাষ্ট্র, কেরালা ও তামিলনাড়ুতে। তিন রাজ্যে এক দিনে প্রায় এক লাখ মানুষের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।
তবে আগের তুলনায় মহারাষ্ট্রে দৈনিক সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে এলেও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে।
টানা দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের পর দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণ নেমে এসেছে দেড় হাজারে।
সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার সুযোগে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে টিকা কার্যক্রম জোরদারে রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
করোনা প্রতিরোধে এ পর্যন্ত ২০ কোটি মানুষ এক অথবা দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন ভারতে। চলতি বছরের মধ্যেই ১৩৩ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে প্রাপ্তবয়স্ক সব মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দেশটি।
চলমান পরিস্থিতিতে টিকার অপচয় এক শতাংশের নিচে রাখতে রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও বিভিন্ন রাজ্যে এ হার নিয়মিত ঊর্ধ্বমুখী।
ঝাড়খণ্ডে ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ, ছত্রিশগড়ে ৩০ দশমিক ২ শতাংশ, তামিলনাড়ু ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ, জম্মু-কাশ্মীরে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ টিকার অপচয় হয়েছে। সারা ভারতে এ হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৬ কোটি ৮৫ লাখের বেশি মানুষ। মারা গেছে প্রায় ৩৫ লাখ।
করোনায় প্রাণহানিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর এবং শনাক্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ ভারত। দেশটিতে মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কা অব্যাহত থাকার মধ্যেই আগামী ছয় থেকে আট মাসে তৃতীয় ধাক্কার শঙ্কা জোরালো হচ্ছে।
মহামারি পরিস্থিতির অবনতিতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে করোনার টেস্ট কিট, ওষুধ, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের। রোগীর বিপরীতে স্বাস্থ্য খাতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক লোকবল সংকট।
মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতে থাকায় শ্মশান, কবরস্থানগুলোতেও স্বজনদের মরদেহ নিয়ে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে।