পশ্চিমবঙ্গের ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সদ্য নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায় নিয়ম অনুযায়ী সশরীরে বিধানসভায় গিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি চাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার নিজের কেন্দ্র ভবানীপুর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন।’ তিনি এও বলেন, ‘দলের নির্দেশে আমি ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হিসেবে পদত্যাগ করলাম।’
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা করেন। পরে তিনি ওই কেন্দ্রে পরাজিত হন। ভারতীয় সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি মন্ত্রিসভার অংশ হতে পারেন কিন্তু তাকে ছয় মাসের মধ্যে কোনো কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শুক্রবার শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় ইস্তফা দিয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে।
এর আগে খড়দা কেন্দ্র থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অসুস্থতার কারণে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। তাই তাকেও ছয় মাসের মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী কোনো কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে আসতে হবে। তৃণমূল বিধায়ক প্রয়াত কাজল সিনহার কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন অমিত মিত্র।
সেই কারণে নিজের কেন্দ্র ভবানীপুরের উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে। তাই শোভন দেব বিধায়কের পদ থেকে ইস্তফা নিয়েছেন।
এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে নির্বাচিত না হয়েও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। পরে এই ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে আসেন তিনি।
তৃণমূলের পুরোনো সৈনিক শোভন দেব বরাবর রাসবিহারী কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিধায়ক হয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়। ১৯৯৮ সালে বারুইপুর ছেড়ে তৃণমূলের হয়ে রাসবিহারী কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে লড়েন এবং সেই উপনির্বাচনে জিতে শোভন দেবের হাত ধরে প্রথম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রবেশ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস।
এখন শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে পদত্যাগ করায় ওই কেন্দ্রে আবারও হবে উপনির্বাচন। তৃণমূল সূত্রের খবর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কেননা ছয় মাসের মধ্যে তাকে কোনো কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে আসার নিয়ম রয়েছে।
একইভাবে শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে তৃণমূল মন্ত্রিসভার সদস্য। বিধায়ক পদে ইস্তফা দেয়ায় তাকেও অন্য কোনো কেন্দ্র থেকে জিতে আসতে হবে। অথবা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হবে। নাকি তিনি রাজ্যসভার সদস্য হবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে জোর জল্পনা।