মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সহিংসতা অবশ্যই থামাতে হবে বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
বৃহস্পতিবার বিশ্ব সংস্থাটির সাধারণ পরিষদে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় তিনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ও ফিলিস্তিনিদের দ্রুত যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।
পাশাপাশি, পরিস্থিতি মোকাবিলায় পূর্ণ মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে দুই পক্ষকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
সাধারণ পরিষদের বৈঠকটির আয়োজন করে অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) ও আরব গ্রুপ।
বৈঠকে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ১০ দিনে ভয়াবহ ও বীভৎস সহিংসতা দেখেছে বিশ্ববাসী। গাজায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুহুর্মুহ বোমা হামলায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত।
‘বোমা হামলায় আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে একই পরিবারের ৯ সদস্য নিহত হওয়ার খবর আমাকে গভীরভাবে শঙ্কিত করেছে। নরকের যন্ত্রণা নেমে এসেছে গাজার শিশুদের জীবনে।’
আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় গণমাধ্যমের ভবন ধ্বংসের ঘটনায় আমি খুবই শঙ্কিত। একই সঙ্গে সাংবাদিক হত্যার ঘটনাটি ছিল ন্যক্কারজনক। সাংবাদিকের অধিকার রয়েছে স্বাধীনভাবে তার কাজ করে যাওয়ার।’
এসময় তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে গাজায় সবধরনের বাধা তুলে দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বানও জানান।
ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে গাজা থেকে হামাসের রকেট ছোড়া বন্ধেরও আহ্বান জানান তিনি।
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার আগে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের। ছবি:এএফপিতিনি জানান, আত্মরক্ষার নামে সহিংসতা ও জঙ্গিবাদের কোনো আইনিভিত্তি নেই। সহিংসতায় কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে ইসরায়েলকে তা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
গাজায় প্রাণহানি অব্যাহত
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৭। এদের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ জন নারী ও ৬৪ জন শিশু।
গাজায় ১১তম দিনে গড়িয়েছে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান। দেশটির দাবি, নিহতদের মধ্যে রয়েছে দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনি বিদ্রোহী।
অবরুদ্ধ গাজার উত্তরাঞ্চলে বৃহস্পতিবার ভোরেই ১০০ দফার বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজার শাসকদল হামাসের স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয় বলে দাবি তেল আবিবের।
সহিংসতায় নিজ যোদ্ধাদের হতাহতের বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি হামাস। তবে পাল্টা জবাবে ইসরায়েলের দিকেও রকেট ছুড়েছে ফিলিস্তিনি বিদ্রোহীরা।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় চার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে গাজা থেকে।
এ কদিনের সহিংসতায় ২ শিশুসহ ১২ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
অবরোধে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ২০ লাখ বাসিন্দার গাজা উপত্যকা নতুন করে সহিংসতার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনে অঞ্চলটিতে বোমা মেরে অর্ধশত স্কুল-হাসপাতালসহ ১০০-এর কাছাকাছি ভবন আংশিক বা পুরোপুরি ধসিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বিমান।
জ্বালানি সংকটে অঞ্চলটির মৌলিক সেবাও বন্ধের পথে।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।