গাজা উপত্যকায় দায়ের এল-বালাহ শহরে তিন রুমের ফ্ল্যাটে বাস করতেন শারীরিক প্রতিবন্ধী ইয়াদ সালহা, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আমানি ও তাদের তিন বছরের মেয়ে নাঘাম। বুধবার দুপুরে খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। হঠাৎ বোমা হামলা হয়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনজনই।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি বোমা হামলায় ৩৩ বছর বয়সী ইয়াদের ঘর ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়ে রয়েছে নাঘামের লাল রঙের ভাঙা বাইসাইকেল।
পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়ে হতবিহ্বল ইয়াদের ভাই ৩১ বছর বয়সী ওমর সালহা। মর্গে তিনি জানান, তার ভাই ১৪ বছর ধরে হাঁটতে পারেন না। তিনি কোনো সশস্ত্র যোদ্ধাও ছিলেন না।
হামলার সময় প্রতিবেশীর ঘরে ছিলেন ওমর। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই কী করেছে? সে শুধু তার হুইলচেয়ারে বসে ছিল। তার স্ত্রীর অপরাধ কী? তাদের মেয়েও বা কী করেছে? ওই সময় তারা সবাই মধ্যাহ্নভোজের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।’
ওমর সালহা বলেন, তার ভাই ইয়াদ বেকার ছিলেন। মা ও তিন ভাইয়ের সঙ্গে ফ্ল্যাট ভাগাভাগি করে থাকতেন।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার অন্য অনেক দরিদ্র পরিবারের মতো ইয়াদের পরিবারও ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত জাতিসংঘের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
বুধবার দুপুরে ইসরায়েলের বোমা হামলার সময় ওমর সালহার মা উম ইয়াদও ঘরে ছিলেন না। দুই দিন আগে ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলেন তিনি।
ছেলেহারানো ৫৮ বছর বয়সী এই মা বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার প্রার্থনা করত আমার বড় ছেলে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। এরই মধ্যে মৃত্যু হলো তার।’
এদিকে স্ত্রী, সন্তানসহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নিহতের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গাজার উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসেফ আবু আল-রিশ। নিরীহ মানুষকে ঘরের ভেতরে হত্যা করাকে ‘অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আর কত মানুষ মরলে পড়ে বিশ্ব বিবেক নড়েচড়ে বসবে?’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১০ মে শুরু হওয়া ইসরায়েলের বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৪ শিশুসহ ২২৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের পুলিশ জানিয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে ১২ ইসরায়েলিকে রকেট হামলায় হত্যা করেছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র বাহিনী। এদের মধ্যে দুটি শিশুও রয়েছে।