ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান সহিংসতা বন্ধে জাতিংসঘের নিরাপত্তা পরিষদে আবারও খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে ফ্রান্স। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেয়া নিশ্চিত হলেও বৈরীতা অবসানের পাশাপাশি অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর পথ খুলে দেয়ার কথাও বলা হয়েছে প্রস্তাবে।
খসড়া প্রস্তাব প্রকাশের ঘোষণাকালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাখোঁর কার্যালয় এলিজি প্যালেস বলেছে, ‘এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতেই হবে। অস্ত্রবিরতির সময় এসে গেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে এখন উদ্যোগী হতেই হবে।’
ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা উপত্যকায় চলমান সংকট নিয়ে জাতিসংঘে কূটনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স।
গত এক সপ্তাহে গাজা ইস্যুতে চীন, নরওয়ে ও তিউনিসিয়ার দেয়া তিনটি প্রস্তাব ও বিবৃতি ভেটো দিয়ে আটকে দিয়েছে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে দেশটি চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক মুখপাত্র।
মিসর ও জর্ডানের সঙ্গে ফ্রান্সের সমন্বিত এই প্রস্তাবেও ভেটো দেবে বলে আভাস দিয়েছে ওয়াশিংটন।
খসড়া প্রস্তাবে ভোটের কোনো সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেনি ফ্রান্স। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য দেশের মধ্যে প্রস্তাবটি নিয়ে তেমন আলোচনাও দেখা যায়নি।
গাজা ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের গৃহীত পদক্ষেপ বারবার যুক্তরাষ্ট্রের বাধায় আটকে যাওয়া নিয়ে সমালোচনার মুখে রয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ।
বুধবার এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
গত এক সপ্তাহে গাজা ইস্যুতে এ নিয়ে চতুর্থবার ফোনালাপ হয়েছে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে।
যদিও এতে নমনীয় হওয়ার কোনো ইঙ্গিত নেই নেতানিয়াহুর দিক থেকে। বরং বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপ উপেক্ষা করে বুধবার আবারও হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
গাজায় রক্তপাত বন্ধে ইসরায়েলে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসবেন জার্মানির শীর্ষ কূটনীতিকরা। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস জানিয়েছেন, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে ফিলিস্তিনে অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন তিনি।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ১১ দিনের বিমান হামলায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৬৪ শিশু ও ১০০ নারীসহ ২২৭ জন ফিলিস্তিনি। ২০১৪ সালের পর অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলায় এ পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি হারিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
মুসলমান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র ভূমি খ্যাত অবরুদ্ধ পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছিল উত্তেজনা। এর জেরেই শুরু হয় সহিংসতা।
আল-আকসা থেকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে ইসরায়েলে রকেট ছোড়ে হামাস। পাল্টা জবাবে ১০ মে থেকে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।