অবরুদ্ধ গাজায় সামরিক আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইসরায়েল ও দখলকৃত পশ্চিম তীরে ঐক্যবদ্ধ ধর্মঘট শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা।
উপত্যকায় ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞ ও হামাস নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যেই মঙ্গলবার শুরু হয় বিরল এ ধর্মঘট।
এর অংশ হিসেবে বন্ধ রাখা হয়েছে জনসেবামূলক কার্যক্রম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রায় সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
অস্ত্রবিরতি কার্যকরে বিভিন্ন দেশের চাপ ও আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিনে বাড়ছে সহিংসতা। জোরালো হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির আন্দোলন।
গাজায় বোমা হামলার পরিধি কমিয়ে আনতে ইসরায়েলকে রাজি করানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। অস্ত্রবিরতির জন্য ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করছে মিসর। যদিও কোনো দিক থেকেই এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপ উপেক্ষা করেই গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।মঙ্গলবার রাতে ২৫ মিনিটে গাজা উপত্যকায় ১২২টি বোমা ফেলেছে ইসরায়েলি বিমান।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় সংঘর্ষের জেরে গত সপ্তাহেও ইসরায়েলে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত হয়। অবরুদ্ধ পশ্চিম তীরে সহিংস আন্দোলন হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সমন্বিত এ ধর্মঘট তেল আবিবের জন্য ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে এক ধরনের সতর্কবার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
ধর্মঘটের ফলে সব দোকানপাট বন্ধ থাকায় জেরুজালেমের ব্যস্ত প্রাচীন শহরে নেমে এসেছে সুনসান নীরবতা। বেশিরভাগ জায়গায় ধর্মঘট শান্তিপূর্ণ হলেও পশ্চিম তীরের কয়েকটি শহরে সহিংসতা হয়েছে।
রামাল্লায় টায়ার পুড়িয়ে ক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন হাজারো ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা চৌকি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছেন অনেকে।
জবাবে সেনারা কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে অবিস্ফোরিত ক্যানিস্টার তুলে নিয়ে সেনাদের দিকেই উল্টো ছুড়ে মেরেছেন বিক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরা।
বিক্ষোভের সময় কমপক্ষে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। আহত হয়েছে দেড় শতাধিক ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সহিংসতা হয়েছে বেথেলহাম, হেবরনসহ আরও অনেক শহরে।
দুইজন সেনা আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
ইসরায়েলের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ২০ শতাংশ ফিলিস্তিনি। তাদের সঙ্গে ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবরুদ্ধ হাজারো মানুষের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত এ ধর্মঘট নজিরবিহীন।
মূলত গাজায় ইসরায়েলের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার উপেক্ষা করে ইসরায়েলের ইহুদিবাদী নীতিমালার বিরুদ্ধে প্রতিবাদই ধর্মঘটের লক্ষ্য।
যদিও শ্রেণিবিভাজনের এ অভিযোগ নাকচ করে ইসরায়েলের দাবি, সব নাগরিককে সমান অধিকার দিচ্ছে দেশটি।
সহিংসতার জন্য গাজার শাসক দল হামাস ও তাদের সহযোগী ইসলামিক জিহাদকে দায়ী করে আসছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের নেতাদের এই ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। অবরুদ্ধ পশ্চিম তীর থেকে পরিচালিত রাষ্ট্রহীন এ সরকার অঞ্চলটিতে সব মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। স্বেচ্ছায় ধর্মঘট পালন করছে বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
ধর্মঘটের আয়োজকদের একজন মোহাম্মদ বারাক বলেন, গাজা ও জেরুজালেমে ইসরায়েলি আগ্রাসন ও পুলিশের বর্বর নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা এক হয়েছে।
যুদ্ধের কারণে ফিলিস্তিনিদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণও ঘটছে ইসরায়েলে। দেশটির বিভিন্ন সড়কে ইহুদিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের মারামারি, ভবন ও যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ইসরায়েল ও পশ্চিম তীরে সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে ফিলিস্তিনের বিক্ষোভকারীদের সংঘাত গত কয়েক দিনে নিয়মিত দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। এসব সংঘর্ষে হতাহত হয়েছেন অনেকে।
ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছিল উত্তেজনা। এর জেরেই শুরু হয় সহিংসতা।
আল-আকসা থেকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে ইসরায়েলে রকেট ছোড়ে হামাস। পাল্টা জবাবে ১০ মে থেকে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামলা চলছে গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চলে।
ইসরায়েলের অবিরাম বিমান হামলা এবং গুলিতে ৯ দিনে গাজা ও পশ্চিম তীরে প্রায় ১০০ নারী, ৬৩ শিশুসহ নিহত হয়েছে কমপক্ষে ২১৮ ফিলিস্তিনি। ঘরবাড়ি হারিয়েছেন অর্ধলাখের বেশি।
বিপরীতে গাজার শাসক দল হামাসের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে নিহত ইসরায়েলির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ জনে।