বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আদালতের রায় উপেক্ষা করে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো মসজিদ

  •    
  • ১৮ মে, ২০২১ ২১:৪৪

স্থানীয় ইমাম ও মসজিদ কমিটির সদস্য মওলানা আব্দুল মুস্তাফা বলেন, ‘এলাকার সব মুসলমান ভীত ছিল। তাই মসজিদ ভাঙার সময় তারা কেউ এর কাছাকাছি যায়নি বা প্রতিবাদ করারও সাহস পায়নি। এখনও পুলিশের ভয়ে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্য এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন বেশ কয়েকজন মুসলমান।’

ভারতের উত্তর প্রদেশে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কয়েক দশকের পুরোনো একটি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এর আগে ১৯৯২ সালে একই রাজ্যের অযোধ্যা শহরে বাবরি মসজিদ ভেঙে দেয় হিন্দু জাতীয়তাবাদী লোকজন।

মসজিদ কমিটির নথির বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, উত্তর প্রদেশের রাম সানেহি ঘাট শহরের ওই মসজিদটি ছয় দশকের পুরোনো।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার মসজিদ এলাকা খালি করে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। একপর্যায়ে বুলডোজার এনে মসজিদটি ভেঙে দেয়া হয়। মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পরে নদীতে ফেলা হয়।

মসজিদটি যেখানে ছিল, সেখান থেকে এক মাইলের মধ্যে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে, এজন্য নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

উত্তর প্রদেশ রাজ্য বর্তমানে শাসন করছে ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন বিজেপি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ দেশটির ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের হরহামেশাই সন্ত্রাসী তকমা দেন। রাজ্যের মুসলমান জনগোষ্ঠীর জন্য বৈষম্যমূলক আইনও পাস করেন তিনি।

রাম সানেহি ঘাট শহরের স্থানীয় ইমাম ও মসজিদ কমিটির সদস্য মওলানা আব্দুল মুস্তাফা বলেন, ‘মসজিদটি কয়েক শ বছরের পুরোনো। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে আসতেন।’

তিনি বলেন, ‘এলাকার সব মুসলমান ভীত ছিলেন। তাই মসজিদ ভাঙার সময় তারা কেউ এর কাছাকাছি যাননি বা প্রতিবাদ করারও সাহস পাননি। এখনও পুলিশের ভয়ে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্য এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন বেশ কয়েকজন মুসলমান।’

মসজিদ ভাঙার বিষয়ে আদর্শ সিং নামের এক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘মসজিদের বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। খালি জানি, সেখানে একটি অবৈধ স্থাপনা ছিল। উত্তর প্রদেশ হাইকোর্ট এটিকে অবৈধ বলে রায় দেয়। এ কারণে আঞ্চলিক জ্যেষ্ঠ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ওই স্থাপনা ভাঙার বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’

মসজিদের অবস্থান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি তুলে আসছিল স্থানীয় প্রশাসন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ মসজিদ কমিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় তারা। এতে বলা হয়, মসজিদ ভবনের অবস্থান কীভাবে বাছাই করা হয়েছে, তা বিস্তারিত জানাতে হবে। পাশাপাশি ওই ভবনকে অবৈধ স্থাপনা হিসেবে উল্লেখ করে ভেঙে দেয়ারও ইঙ্গিত দেয়া হয়।

কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে ১৯৫৯ সাল থেকে মসজিদটির বিদ্যুৎ সংযোগের নথিসহ মসজিদ স্থাপনার পক্ষে বিস্তারিত ব্যাখ্যা লিখে পাঠায় কমিটি। অবশ্য ওই জবাব অফিশিয়াল রেকর্ডভুক্ত করেনি স্থানীয় প্রশাসন।

স্থাপনাটি ভাঙা হতে পারে এ উদ্বেগের জায়গা থেকে ১৮ মার্চ উত্তর প্রদেশ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় মসজিদ কমিটি। মসজিদটি ভেঙে দেয়ার পক্ষে স্থানীয় প্রশাসনের কয়েকটি বক্তব্যের (এটি অবৈধভাবে নির্মিত ও যান চলাচলে বাধা দিচ্ছে) ব্যাখ্যা চায় হাইকোর্ট। যদিও মসজিদটি কোনোভাবে রাস্তার ওপর গড়া হয়নি।

পরবর্তী সময়ে মসজিদটিতে প্রবেশ বন্ধ করতে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে প্রশাসন।

১৯ মার্চ জুমার নামাজের সময় স্থানীয় মুসল্লিদের মসজিদটিতে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভে নামেন বেশ কয়েকজন মুসলমান। প্রতিবাদ দমাতে ৩৫ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ রিপোর্টও দেয়া হয়।

স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে উদ্বিগ্ন হয়ে এপ্রিল মাসে হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি মামলা করে মসজিদ কমিটি। ২৪ এপ্রিল হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৩১ মে পর্যন্ত মসজিদটি কোনোভাবে বেদখল বা ভেঙে দেয়া যাবে না।

মসজিদ ভাঙার পর উত্তর প্রদেশের সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জাফুর আহমেদ ফারুকি বলেন, ‘অবৈধ ও জবরদস্তিমূলক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তারা ১০০ বছর আগের মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর