নারদা কেলেঙ্কারির ঘটনায় তৃণমূলের দুই মন্ত্রীসহ চার নেতাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা সিবিআই অফিসে হাজির হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চার নেতাকে বেআইনিভাবে তুলে নেয়ার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকেও গ্রেপ্তার করুন।’
গ্রেপ্তার চারজনকে যতক্ষণ না ছাড়া হবে, ততক্ষণ সিবিআইয়ের পশ্চিবঙ্গের প্রধান কার্যালয় নিজাম প্যালেস না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন মমতা।
নারদা কেলেঙ্কারির ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের নেতা ও পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সাবেক মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় ও মদন মিত্রকে সোমবার সকালে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই।
পরে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় সিবিআই অফিস নিজাম প্যালেসে। গ্রেপ্তারের খবরে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা যান কলকাতার মেয়র ও পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের চেতলার বাসায়।
সেখান থেকে পরে সরাসরি চলে যান নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের অফিসে। মমতা সিবিআই অফিসে পৌঁছানোর আগেই সেখানে তৃণমূলের শত শত নেতা-কর্মী জড়ো হতে শুরু করে। মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছানোর পর সেখান হাজার হাজার তৃণমূল নেতা-কর্মী বিক্ষোভ শুরু করেন।
নিজাম প্যালেসে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সাংবাদিকদের মমতা বলেন, ‘আইন না মেনেই তাদের তুলে আনা হয়েছে। তাদের ছেড়ে না দেয়া পর্যন্ত আমি এখানেই অবস্থান করব।’
রাজ্যপাল জয়দীপ ধনকার ওই চারজনকে গ্রেপ্তারে চলতি মাসের শুরু দিকে সিবিআইকে অনুমতি দেয়।
তবে স্পিকারের অনুমতি না দিয়ে তাদের গ্রেপ্তারকে বেআইনি বলছে তৃণমূলের নেতারা।
২০১৪ সালে নারদা নিউজের মাথা ম্যাথু স্যামুয়েল স্টিং অপারেশন করেন। ম্যাথুর পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমপেক্স কনসালট্যান্সি নামে একটি কাল্পনিক সংস্থার হয়ে নারদা নিউজের লোকজন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের কাছে পৌঁছান।
নারদা নিউজের দাবি, ওই কাল্পনিক সংস্থা রাজ্যে ব্যবসা চালানোর জন্য ৭২ লাখ টাকা ঘুষ দেয় তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের।
মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, সুলতান আহমেদ, সৌগত রায়, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়, পুলিশ কর্মকর্তা এমএইচ আহমেদের নাম জড়িয়ে যায় নারদা কেলেঙ্কারিতে। এদের টাকা নেয়ার একটি ভিডিও সামনে আসে।
নারদা কাণ্ডে মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীর নাম থাকা সত্ত্বেও তারা গ্রেপ্তার হয়নি। বিজেপিতে যোগ দেয়াতেই তাদের ছাড় দেয়া হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের।
সিবিআইয়ের সূত্র বলছে, বেলা ২টার মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের ব্যাংকশাল আদালতে তোলা হবে।
এরই মধ্যে গ্রেপ্তার নেতাদের আইনজীবীরা সিবিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তৃণমূল নেতা সৌগত রায় বলেন, ‘বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে সিবিআই প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে। আমি এর নিন্দা করছি।’
রাজ্যপাল কীভাবে সিবিআইকে অনুমোদন দিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আদালতে এর মোকাবিলা হবে।’
বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিধানসভার স্পিকারকে এড়িয়ে কেন সিবিআই রাজ্যপালের অনুমতি নিতে গেল? এটা আইনবিরুদ্ধ।’