ভারতের পশ্চিমবঙ্গে স্মরণকালের বড় জয় পেয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসনেত্রী মমতা ব্যানার্জি। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বারের মতো শপথ নেবেন তিনি।
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় দলীয় কর্মীদের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এ দিনই দেশজুড়ে ধরনার ডাক দিয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি।
পশ্চিমবঙ্গে আট দফায় অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করে প্রচার চালায় বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চলমান করোনা মহামারির তোয়াক্কা না করে দফায় দফায় পশ্চিমবঙ্গ সফর করেন। সভা-সমাবেশ করে বিপুল উদ্যমে নির্বাচনি প্রচার চালান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মহামারির এই ভয়াবহ সময়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বিজেপির এই প্রচারকে মেনে নেয়নি। পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে এভাবে খোলামেলা প্রচারকেও দায়ী বলে মনে করেন তারা। এই প্রচারই বিজেপির ভোট কেটেছে।
ভয়ঙ্কর করোনা সংক্রমণের মধ্যে ক্ষমতা দখলের রাজনৈতিক উন্মাদনায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, মিঠুন চক্রবর্তীরা ভোটের প্রচারে গোটা রাজ্য তোলপাড় করেন। কোথাও করোনা বিধি পালন করার বালাই ছিল না।
কমিশনও জনসভা বা রোড শোতে কোনো প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়নি। ভেতরে ভেতরে সংক্রমণ বেড়েছে। কমিশনের হুঁশ ফেরেনি। দফায় দফায় দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে ভোট প্রচারের ফলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি ঘটেছে বলে মনে করেন অধিকাংশ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞও।
এদের এই প্রচারাভিযানে ক্ষুব্ধ হয়েছে মানুষ। একজন ৬৫ বছর বয়সী নারী মুখ্যমন্ত্রীকে মোদি, অমিত শাহ যে ভাষায় যে ভঙ্গিতে আক্রমণ করেছেন, তাতে বাংলার মানুষ অপমানিত বোধ করেছেন । ‘দিদি ও দিদি’— মোদির এই সম্বোধনকে অনেকে নোংরামি বলেও মনে করেন।
বাংলার ইতিহাস, মনীষীদের উক্তি ভুলভাবে বলার জন্যও মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে।
এর ফলে বিপুলসংখ্যক আসনে জয়লাভ করে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। তৃণমূলনেত্রী নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে পরাজিত হলেও তৃতীয়বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন তিনিই । ভারতীয় সংবিধানের ব্যবস্থা অনুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে কোনো কেন্দ্র থেকে তাকে জিতে আসতে হবে ।
এদিকে বুধবার স্থানীয় সময় ১০ টা ৪৫ মিনিটে রাজভবনে শপথ নেবেন মমতা ব্যানার্জি। করোনার কারণে শপথ অনুষ্ঠান এবার অনাম্বড় হচ্ছে।
প্রথম দফায় কেবল মমতা ব্যানার্জি শপথ নেবেন। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা শপথ নেবেন ৯ মে । শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান, অধীর চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে ।
এদিকে মমতার শপথ গ্রহণের দিনই দেশজুড়ে ধরনার ডাক দিয়েছে বিজেপি। রাজ্যে ভোটের ফল ঘোষণার পরই রাজনৈতিক সহিংসতায় ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বিজেপি ও তৃণমূল পরস্পরকে দুষছে।
এ ঘটনায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় রাজ্যের কাছে প্রতিবেদন চেয়ে পাঠিয়েছে । দলীয় কর্মীদের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে মমতার শপথ গ্রহণের দিনই বিজেপি দেশজুড়ে ধর্নার এই ডাক দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিজেপিকে উড়িয়ে দিয়ে কলকাতার মসনদ মমতার