রাজনৈতিক জোট গঠন বা ভোটের ফলাফল দুটি ক্ষেত্রেই একেবারে পরস্পরবিরোধী মেরুতে অবস্থান ভারতের দুই রাজ্যের বামপন্থিদের। একদিকে দীর্ঘ দিনের প্রথা ভেঙে কেরালায় ক্ষমতার ফিরছে শাসক শিবির। সেখানে জিততে চলেছে সিপিএমের নেতৃত্বধীন এলডিএফ জোট।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ফলাফলে বামেদের প্রাপ্তি শূন্য। এ তো গেল ফলাফলের কথা। নির্বাচনের আগে জোট গঠনের প্রশ্নেও কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গের বামেদের মধ্যে ছিল আকাশপাতাল ফারাক। কেরালায় বামেদর প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। পশ্চিমবঙ্গে বামদের জোটসঙ্গী কংগ্রেস।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থিদের ভরাডুবির একটা প্রধান কারণ হলো, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সমর্থন হারানো। একই অবস্থা কংগ্রেসেরও। বাম ও কংগ্রেসের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত দুটি জেলা মালদহ, মুর্শিদাবাদে এবার শূন্যের কোটায় ওই দুটি দল। আসলে একই সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির বিরোধিতা এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ভোটাররা মেনে নিতে পারেননি। বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভোটাররা, যারা পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার প্রায় ৩২ শতাংশ, তারা মনে করেছেন বিজেপিকে রাজ্যের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে হলে তৃণমূল কংগ্রেসই এই মুহূর্তে একমাত্র বিকল্প।
বামফ্রন্ট একনাগাড়ে ৩৪ বছর শাসন করেছে পশ্চিমবঙ্গ। দীর্ঘদিন শাসনক্ষমতায় থাকার ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি দানা বেঁধেছিল বাম দলগুলোর মধ্যে। সেই কালিমালিপ্ত ছবি থেকে মাত্র ১০ বছরে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বাম কর্মী-সমর্থকদের বিকল্প খুঁজে নেয়ার মানসিকতা। যার প্রকাশ দেখা গিয়েছিল ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ভোটে।
ওই নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল প্রায় ৪০ শতাংশে, বামেদের ভোট শতাংশ নেমে এসেছিল ৭-এর নিচে। ফল বিশ্লেষণে এটি পরিষ্কার, বামেদের একটা বড় অংশের ভোট বিজেপির ঝুলিতে জমা হয়েছিল তৃণমূলকে শায়েস্তা করার মানসিকতায়। এদের স্লোগান ‘এখন রাম-পরে বাম’।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও সেটিই হয়েছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গে আরও অনেকটাই তলিয়ে গেল বামেরা, অন্তত সংসদীয় রাজনীতির অঙ্কে। অন্যদিকে মাথা উঁচু কেরালার বামদের।