আফগানিস্তানের সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন তালেবানের সঙ্গে ক্ষমতা বণ্টনের প্রস্তাব দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। শর্ত দিয়েছেন, যুদ্ধের পথ ত্যাগ করতে হবে সংগঠনটিকে।
১৯৯২ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) সমর্থিত আফগান সরকারকে উৎখাতের ২৯তম বর্ষপূর্তি বুধবার। এদিন বিজয় দিবসের ভাষণেই দেশটিতে যুদ্ধ বন্ধে তালেবানের প্রতি যৌথ সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন ঘানি।
জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে ঘানি বলেন, ‘অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চান তিনি। যুদ্ধ ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন কখনোই সম্ভব নয়। তালেবানের জন্য যুদ্ধের পথ পরিহারের এখনই সঠিক সময়। ক্ষমতা বণ্টনের মাধ্যমে তাদের উচিত গণতন্ত্র রক্ষা করা।’
টার্কিশ রেডিও ও টেলিভিশনের (টিআরটি) প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাষণে আফগান ভূখণ্ডে সাবেক সোভিয়েত সরকারের সশস্ত্র বাহিনী রেড আর্মির বিরুদ্ধে সফল বিপ্লবের আগ পর্যন্ত দেশটিতে ভয়াবহ রাজনৈতিক অচলাবস্থা, ধ্বংসযজ্ঞ ও নিরাপত্তা সংকটের স্মৃতিচারণ করেন ঘানি।
তিনি বলেন, ‘আবারও সেই একই সংকটময় পরিস্থিতির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে আফগানিস্তান। এ দেশের মানুষের সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্যের কারণেই সেদিনের লড়াই সফল হয়েছিল। আজ আবার দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে হাঁটতে সেই একই সংহতি দরকার আমাদের।’
আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহার শুরুর একদিন পর আসে এ আহ্বান।
মঙ্গলবার আফগানিস্তানে নিয়োজিত সব আমেরিকান সেনাদের দ্রুততম সময়ে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয় ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে তালেবানের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুসারে আসছে মে মাসেই আফগানিস্তান থেকে পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল ওয়াশিংটনের।
নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে সময়সীমা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর পর থেকে দেশটিতে সহিংসতা নতুন মাত্রা নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহার পরিকল্পনা
মঙ্গলবার সেনা প্রত্যাহারের সময় বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী প্রধান কর্মকর্তা জালমেই খলিলজাদ।
আমেরিকান পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সামনে তিনি জানান, আফগানিস্তানে সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে ফের ক্ষমতা দখলের চেষ্টা হলে তালেবানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে ওয়াশিংটন।
তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে সংঘর্ষে এটা প্রমাণিত যে আফগানিস্তানে সহিংসতার কোনো সামরিক সমাধান নেই। সংঘাতের ৪০ বছর পার করেছে দেশটি। আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সমর্থনে দেশটিতে সংঘাতরত সব পক্ষ নিজেরাই সমঝোতায় পৌঁছালে সেটাই হবে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতার একমাত্র পথ।’