করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে পূর্ণাঙ্গ লকডাউন কার্যকর করতে যাচ্ছে তুরস্ক।
দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে লকডাউন শুরু হবে। চলবে কমপক্ষে আগামী ১৭ মে পর্যন্ত।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সোমবার জাতীয় পর্যায়ে লকডাউন আরোপের এ ঘোষণা দেন।
তিনি জানিয়েছেন, টানা তিন সপ্তাহের এ লকডাউনে দেশজুড়ে সব ধরনের অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে।
রাজধানী আঙ্কারায় মন্ত্রিসভার সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে এরদোয়ান বলেন, লকডাউন চলাকালীন সব পেশাজীবীরা ঘরে থেকে কাজ করবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত নির্দিষ্ট কিছু পেশাজীবী (যেমন: চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, খাদ্য ও উৎপাদন খাতের সঙ্গে জড়িত কিছু কর্মজীবী) এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
রমজান মাসের বাকি সময় এবং মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের তিন দিন এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
এরদোয়ান বলেন, ‘ইউরোপের দেশগুলোতে জনজীবন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। সবকিছু চালু হচ্ছে।
‘এ পর্যায়ে আমরা চাই আমাদের দেশে করোনার সংক্রমণ দিনে পাঁচ হাজারে নামিয়ে আনতে। ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বাণিজ্য, শিক্ষাসহ সব খাতকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
গত রোববার থেকেই তুরস্কের সব সুপারমার্কেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এগুলোর পাশাপাশি সব ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ লকডাউনের সময় কেবল বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়ার মধ্যে নিজেদের কার্যক্রম সীমিত রাখবে।
জরুরি প্রয়োজনে এক শহর থেকে অন্য শহরে যেতে হলে প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। গণপরিবহন চলবে ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে। আবাসিক হোটেলগুলোও সীমিতসংখ্যক অতিথি নিতে পারবে।
তুরস্কে পূর্ববর্তী করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী হোটেলে অতিথির সংখ্যা ও এক শহর থেকে অন্য শহরে ভ্রমণ নিষিদ্ধ ছিল না। কিন্তু এবারের লকডাউনে বদলানো হয়েছে সে নিয়ম। পূর্ণ লকডাউনে কারফিউ ও অন্যান্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই কার্যকর হবে।
কিন্ডারগার্টেন ও নার্সারি স্কুলসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে এ সময়ে। স্থগিত থাকবে সব পরীক্ষা।
স্বাস্থ্য সংকটের এ সময়ে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় বাড়তি অর্থ আদায় করতে পারবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন এরদোয়ান।
গত ২৪ ঘণ্টায় তুরস্কে ৩৭ হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার মানুষের মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ ছিল না। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৫৩ জনের।
এ পর্যন্ত তুরস্কে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৬ লাখের বেশি মানুষের দেহে। মারা গেছেন প্রায় ৩৯ হাজার মানুষ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন সাড়ে তিন হাজারের বেশি।
জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে তিন মাসের বেশি সময়ে তুরস্কে দুই কোটি ১৫ লাখের বেশি মানুষ করোনার এক অথবা দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কা ভয়াবহ রূপ নেয়ায় রমজানের শুরুতেই স্বাস্থ্যবিধি কঠোর করেছিল তুর্কি প্রশাসন।
সাপ্তাহিক কর্মদিবসে দেশজুড়ে রাত্রিকালীন কারফিউ, আন্তনগর ভ্রমণ সীমিতকরণ, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পূর্ণ কারফিউ আরোপসহ নেয়া হয়েছিল নানা ব্যবস্থা।