প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ওসমানীয় সাম্রাজ্যে আর্মেনীয়দের ওপর সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
দেশটির ইতিহাসে তিনিই প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যিনি ওই ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলেন।
আর্মেনীয়দের ওপর হত্যাকাণ্ডের ১০৬তম বার্ষিকীতে স্থানীয় সময় শনিবার তিনি এ সংক্রান্ত বিবৃতি দেন।
বিবিসি ও আল জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, ‘প্রতি বছর এই দিনে (২৪ এপ্রিল) নিহত আর্মেনীয়দের স্মরণ করি আমরা। পাশাপাশি এ ধরনের নৃশংসতা যেন আর কখনো না ঘটে, সে বিষয়েও পুনরায় অঙ্গীকার করা হয়। যেকোনো ধরনের ঘৃণার বিরুদ্ধে সবসময় সতর্ক থাকার লক্ষ্যেও দিবসটি স্মরণ করা হয়।’
তিনি বলেন, কাউকে দায়ী করা নয়, বরং যা ঘটেছে, তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিতে আর্মেনীয় হত্যাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে ওই হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস। হাউজের ওই পদক্ষেপকে সে সময় স্বাগত জানিয়েছিলেন বাইডেন।
বাইডেনের পূর্বসূরি যুক্তরাষ্ট্রের ডনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ওই হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করেনি। ঘটনাটিকে ‘বিংশ শতাব্দীর অন্যতম ঘৃণ্য নৃশংসতা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প।
আর্মেনিয়ায় ১৯১৫ সালের হত্যাকাণ্ডকে নৃশংসতা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও একে গণহত্যা বলতে বরাবরই অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে তুরস্ক। ন্যাটো সদস্যভুক্ত তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার উদ্বেগ থেকে বাইডেনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন ওই হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেননি।
এদিকে বাইডেনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান। এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, বাইডেনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে। আর্মেনীয়দের ওপর সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মানবাধিকার ও সার্বজনীন মূল্যবোধ সুরক্ষার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আবারও তার অবিচল অঙ্গীকার প্রদর্শন করেছে।
তবে বাইডেনের এ পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়েছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু এক টুইটবার্তায় বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখান করছে তুরস্ক। নিজেদের ইতিহাস নিয়ে কারও কাছ থেকে জ্ঞান নেব না আমরা। এ পদক্ষেপ দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা ও বন্ধুত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ওই বিবৃতিকে খারিজ করছে তুরস্ক। উগ্রপন্থি আর্মেনীয় ও তুরস্কবিরোধী সংগঠনের চাপে যুক্তরাষ্ট্র ওই ঘটনাকে গণহত্যা বলছে।
১৯১৫ সালে কী হয়েছিল
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার কাছে বড় ধরনের পরাজয়ের ঘটনায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী আর্মেনীয়রা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে অভিযোগ তোলে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের তুর্কি শাসকরা। ওই প্রেক্ষাপটে সিরিয়ার মরুভূমিসহ অন্যান্য জায়গায় আর্মেনীয়দের গণহারে বিতাড়িত করে সাম্রাজ্যের নীতি-নির্ধারকেরা। ওই সময় হত্যা, অনাহারে বা রোগে ভুগে অসংখ্য আর্মেনীয়র প্রাণহানি হয়।
ওসমানীয় সাম্রাজ্যে ঠিক কতজন আর্মেনীয় সে সময় প্রাণ হারিয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আর্মেনিয়ার ভাষ্য, ১৫ লাখের মতো মানুষ নিহত হয়েছে। অন্যদিকে তুরস্কের দাবি, মৃতের সংখ্যা তিন লাখের কাছাকাছি। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ জেনোসাইড স্কলার্সের (আইএজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় ১০ লাখের বেশি আর্মেনীয় প্রাণ হারায়।
ওই ঘটনাকে নৃশংসতা হিসেবে স্বীকার করে তুরস্ক। তবে দেশটির দাবি, খ্রিষ্টান আর্মেনীয়দের নির্মূলে কাঠামোগত কোনো চেষ্টা করা হয়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক মুসলমান তুর্কিও জীবন হারিয়েছে।