বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর অঞ্চলকে ঘিরে সামরিক উত্তেজনা প্রশমনে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গোপন বৈঠক হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে।
বৈঠকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানানো হয়।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পুলওয়ামায় ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়। পাকিস্তানভিত্তিক ইসলামিস্ট সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ ওই হামলার দায় স্বীকার করে।
এরপরই পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটির সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ওই বছরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণার পর ভারত ও পাকিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যায়। স্থগিত হয় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার বলা হয়, ওই ঘটনার পর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে বেশ কয়েক বার বৈঠকে বসে দুই দেশের সরকার। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের মধ্যস্থতায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং ও পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের কর্মকর্তারা দুবাইয়ে বৈঠক করেন।
বৈঠকের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে পাকিস্তানের শীর্ষ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, তিনি মনে করেন, তৃতীয় দেশে বেশ কয়েক মাস ধরে বৈঠক করেন ভারত ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
তিনি বলেন, ‘থাইল্যান্ড, দুবাই, লন্ডনে দেশ দুটির কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেছেন বলে আমার ধারণা।’
রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক মিরা ম্যাকডোনাল্ড বলেন, সংকট নিরসনে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা হওয়া ভালো। সবাইকে না জানিয়ে আলোচনা হলে তা দুই দেশের জন্য মঙ্গল।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, কাশ্মীর ইস্যু ছাড়াও আরও কিছু বিষয়ে ভারত-পাকিস্তানের পুনর্মিলনের চেষ্টা স্বাভাবিক।
গত বছর চীনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে সংঘর্ষ বাঁধে ভারতের। এ নিয়ে বিরোধের এখনও মীমাংসা হয়নি। চীন সীমান্তে ভারতকে বাড়াতে হয়েছে সেনা মোতায়েন। এর মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে সংঘাতে যেতে চাইছে না দেশটি। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধে যৌথ বিবৃতি দেয়।
অন্যদিকে চীনের মিত্র পাকিস্তান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা জারি রাখা দেশটির পক্ষে এ মুহূর্তে সম্ভব না। এ ছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের আফগান সীমান্তে পাকিস্তানকে তখন বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে।