মিয়ানমারে শুক্রবার রাত ও শনিবার সকাল পর্যন্ত কমপক্ষে ৬০ বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
এ নিয়ে দেশটিতে পয়লা ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১৮ জনে।
অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স জানিয়েছে, এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার মানুষকে।
এমন অবস্থায় সেনাবাহিনীর ওপর চাপ প্রয়োগে মিয়ানমারকে ‘নো ফ্লাই জোন’ (উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা) ঘোষণা ও দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির প্রতিনিধি।
শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন কিয়াও মোয়ে তুন।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে শিশুসহ শ শ মানুষ নিহত হওয়ার পরও হত্যা বন্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ সময় চলমান অরাজকতা বন্ধ এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তাৎক্ষণিক ও শক্ত ব্যবস্থা নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের প্রতিনিধি বলেন, বেসামরিক এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনীর বিমান অভিযান চলছে। আরও রক্তপাত এড়াতে অঞ্চলগুলোকে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করা উচিত।
সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধেরও আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।
রেডিও ফ্রি এশিয়া জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতা চলছে। বিক্ষোভকারীদের তৈরি করা ব্যারিকেড ভেঙে দেয়া হচ্ছে। আন্দোলনরত মানুষের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হচ্ছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে পুলিশ।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভ দমনের লক্ষ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রমণে নিহত ছয় শতাধিক মানুষের মধ্যে কমপক্ষে ৪৩ জন শিশু ছিল।
যদিও শিশুহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাও মিন তুন বলেন, বাড়িতে ঢুকে শিশুদের ওপর সেনাসদস্যরা কখনোই গুলি চালাবে না। যদি এমন কিছু ঘটে থাকেও তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভারতে অনুপ্রবেশ
চলমান সহিংস পরিস্থিতিতে সীমান্তপথে ভারতে অনুপ্রবেশ করছে মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক নাগরিক। বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এতে বলা হয়েছে, ভারতের মণিপুরে সীমান্ত অঞ্চলে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মিয়ানমার থেকে আসা ‘আশ্রয়প্রার্থীদের ভালোভাবে দেশে ফেরত পাঠানোর’ নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক জনরোষের মুখে দ্বিতীয় একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।
এতে মিয়ানমার থেকে আসা আহত আশ্রয়প্রার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ সব ধরনের মানবিক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।