লন্ডনে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে অভাবনীয় উপায়ে কূটনৈতিক ‘অভ্যুত্থানের’ মাধ্যমে বহিষ্কার ও হেনস্তা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের অনুগতরা স্থানীয় সময় বুধবার লন্ডনে মিয়ানমারের দূতাবাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ওই সময় মিয়ানমারের নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির মুক্তি চাওয়া রাষ্ট্রদূত কিয়াউ জোয়ার মিনকে তারা দূতাবাসে ঢুকতে দেননি।
দূতাবাসের বাইরে গাড়িতে রাত কাটানো রাষ্ট্রদূত মিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পরের দিন বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক র্যাব।
তিনি বলেন, ‘গতকাল লন্ডনে মিয়ানমারের সামরিক শাসকের হয়রানিমূলক পদক্ষেপের আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। আর সাহসিকতার জন্য কিয়াউ জোয়ার মিনকে শ্রদ্ধা জানাই।
‘মিয়ানমারে সেনাশাসন বন্ধের আহ্বান অব্যাহত রাখবে যুক্তরাজ্য। একই সঙ্গে দেশটিতে চলমান ভয়াবহ সহিংসতা থামানো ও গণতন্ত্র দ্রুত ফিরিয়ে আনার আহ্বানও জারি রাখবে যুক্তরাজ্য।’
যুক্তরাজ্যের একাধিক সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে কিয়াউ জোয়ার মিনকে বরখাস্তের সরকারি নোটিশ যুক্তরাজ্যকে দেয় মিয়ানমারের সেনাশাসক। কূটনৈতিক নীতির অংশ হিসেবে চিঠিটি গ্রহণ করা ছাড়া যুক্তরাজ্য সরকারের আর কিছু করার ছিল না।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্য ও লন্ডনে মিয়ানমারের দূতাবাসের ডিফেন্স অ্যাটাশে চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স হিসেবে উপ রাষ্ট্রদূত চিট উইনকে নিয়োগ দেন।
লন্ডনের ঘটনায় মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবগত রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির সামরিক সরকারের মুখপাত্র জাউ মিন তুন।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘চিফ অব মিশন হিসেবে চিট উইনের দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে সরকারি নিয়োগপত্র লন্ডনে আমরা পাঠিয়েছি। তারা চিঠিটি গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রদূত কাউ জোয়ার মিনকে দেশে ফিরে আসতে বলা হয়েছে।’
এর আগে রাষ্ট্রদূত কিয়াউ জোয়ার মিন বলেছিলেন, ‘অনেকটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিরক্ষাবিষয়ক কূটনীতিক প্রশাসক লন্ডন দূতাবাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।’
মিয়ানমারের পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দূতাবাসের বাইরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া দেশের এ পরিস্থিতির অবসান ঘটবে না। দয়া করে আমাদের দেশকে রক্ষা করুন।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে এক বছরের জন্য ক্ষমতায় বসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেনাশাসনের উৎখাত ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে দেশটির মুক্তিকামী হাজার হাজার মানুষ।
স্থানীয় মনিটরিং গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় এখন পর্যন্ত ছয় শর মতো বেসামরিক নাগরিক মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে।